নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: কংসাবতী নদীর জল বাড়তেই বিনপুর-২ ব্লকের বৈতা গ্ৰাম পঞ্চায়েতের যশপুরে জলের স্রোতে বাঁশের সাঁকো ভেসে যায়। কোনও ফেরিঘাট না থাকায় যাত্রীবোঝাই নৌকা দূরের চরে থামছে। স্থানীয় বাসিন্দারা পিঠে ছোট বাচ্চা, কাঁধে সাইকেল, মাথায় জিনিসপত্রের বোঝা নিয়ে কোমর-সমান জল পেরিয়ে পাড়ে আসছেন। কার্যত প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে চলছে নদী পারাপার। এহেন অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দারা স্থায়ী সেতুর দাবি তুলছেন। বৈতা গ্ৰাম পঞ্চায়েতের মাঝখান দিয়ে বইছে কংসাবতী নদী। গ্রীষ্মকালে নদীতে বেশি জল থাকে না। বৈতা ও ধরমপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েত এলাকার ২০টির বেশি গ্ৰামের মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করেন। গ্ৰামবাসীদের পঞ্চায়েত, ব্যাঙ্ক, হাসপাতাল, বাজার-হাটের জন্য ঝাড়গ্রাম শহরে আসতে হয়। বর্ষায় নদী পারাপারে জন্য নৌকার উপর ভরসা করতে হয়। নদীর দু’পারে কোনও ফেরিঘাট নেই। যাত্রীবোঝাই নৌকা সপ্তাহখানেক ধরে নদীর দক্ষিণদিকের পাড়ে পৌঁছতে পারছে না। পাড়ের কিছুটা দূরের চরে নৌকা থেমে যাচ্ছে। ফেরিঘাট না থাকায় কোমর-সমান জলে নেমে নদীর পাড়ে আসতে হচ্ছে। কংসাবতী নদীর জল তীব্র স্রোতে প্রবাহিত হচ্ছে। নৌকার যাত্রীরা সেই স্রোতের মধ্যেই নামছেন। নদীর উপর সেতু তৈরির জন্য বৈতা এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানাচ্ছেন। স্থানীয়দের তরফে ফেরিঘাট তৈরির দাবিও তোলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ভদ্রেশ্বর মাহাত বলেন, আমার বাড়ি নদীর ওপারে মাইতি পাড়ায়। প্রতিদিন নানা কাজে এপারে আসতে হয়। পঞ্চায়েত, ব্যাঙ্ক, বাজার-হাট সবকিছুই নদীর এপারে। নৌকা নদীর চরে এসে ঠেকে যাচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে নদীর পাড়ে উঠতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে মিনি ব্রিজ তৈরির দাবি জানানো হলেও তা আজ পর্যন্ত পূরণ হয়নি।
পলাশী গ্ৰামের বাসিন্দা বৈদ্যনাথ আচার্য, তরুণ আচার্য বলেন, নদী পারাপার করতে গিয়ে চরম কষ্টের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। মহিলা ও বয়স্ক মানুষদেরও জলে নেমে পাড়ে আসতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যার কোনও সুরাহা হচ্ছে না। জল আরও বাড়লে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় ধেরুয়া বা দহিজুড়ি হয়ে ঝাড়গ্রাম শহরে আসতে হয়। ধেরুয়া থেকে ঝাড়গ্রামের দূরত্ব আট কিলোমিটার। দহিজুড়ি থেকে ১৯ কিলোমিটার পথ পার হতে হয়। প্রশাসন এই সময় ফেরিঘাট তৈরির ব্যবস্থা করলে স্থানীয় বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। বৈতা গ্ৰাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তারক চালক বলেন, বাঁশের সাঁকোটি কয়েকদিন আগে ভেঙে গিয়েছে। স্থানীয় মানুষজন নৌকায় নদী পারাপার করছেন। ফেরিঘাট না থাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতিকে বিষয়টি জানানো হবে। বিনপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি নন্দদুলাল মণ্ডল বলেন, বর্ষার সময় নদী পারাপার করতে গিয়ে এই এলাকার মানুষকে খুবই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। নদীর জলে নেমে মানুষজন যেভাবে পাড়ে উঠছেন, তা উদ্বেগজনক। যে কোনও মুহূর্তে কেউ ভেসে যেতে পারে। সেতু তৈরির জন্য একবার সার্ভে হয়েছিল। তারপর বিষয়টি সেভাবে এগয়নি। ফেরিঘাট তৈরির বিষয়টি প্রশাসনের সর্বস্তরে জানানো হবে।