শ্বশুরবাড়িতে এসে নিখোঁজ, ৫ দিন পর দেহ উদ্ধার জামাইয়ের
বর্তমান | ০৬ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: শ্বশুরবাড়িতে এসে নিখোঁজ হয়েছিলেন জামাই। পাঁচ দিন তাঁর কোনও হদিশ ছিল না। শনিবার পাথর চাপা দেওয়া জামাইয়ের দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনাটি রঘুনাথপুর থানার নিলডি গ্রাম পঞ্চায়েতের মণিপুর গ্রামের। শ্বশুরবাড়ি লাগোয়া রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অদূরে জামাইয়ের দেহটি উদ্ধার হয়েছে। মাথার উপরের দিকের অর্ধেক অংশ বড় পাথর চাপা দেওয়া ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম দয়াল মল্লিক (২৫)। তাঁর বাড়ি সাঁওতালডিহি থানার কাঁকী এলাকায়। দয়ালকে খুন করা হয়েছে, নাকি মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিস। অন্যান্য দিনের মতো এদিনও রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিতর কাজ চলছিল। বড় বড় পাথর গাড়িতে বের করে এনে একটি সাইডে জড়ো করা হচ্ছিল। সেখানেই জামাই দয়ালের দেহটি উদ্ধার হয়। খবরটি জানাজানি হতেই ঘটনাস্থলে চলে আসেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ক্ষতিপূরণ ও মৃত্যুর আসল কারণ খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভও দেখান। ঘটনাস্থলে চলে আসে পুলিস। গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে বিক্ষোভ থামানো হয়। সেই সঙ্গে সঠিক তদন্ত করে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাসও দেওয়া হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেহটি তুলে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়।
রঘুনাথপুর মহকুমা পুলিস আধিকারিক রোহেদ শেখ বলেন, ‘আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহটির ময়নাতদন্ত করানো হবে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। সেই মতো তদন্ত শুরু করা হবে।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, প্রায় আড়াই বছর আগে মণিপুর গ্রামে দয়ালের বিয়ে হয়। বর্তমানে এক বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। জৈষ্ঠ্য মাসে স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি এসেছিলেন। সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতেন। মণিপুর গ্রামের প্রায় ১০০ মিটার দূরে রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অবস্থিত। সেখানে দয়ালের দেহ পড়ে থাকা নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩০ জুন রাতে টয়লেট যাওয়ার নামে পুকুরে যাচ্ছি বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হন দয়াল। তারপর আর ফিরে আসেননি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান মেলেনি। ৩ জুলাই মৃতের স্ত্রী সোমা মল্লিক রঘুনাথপুর থানায় স্বামীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে ডায়েরি করেন। এদিন তিনি বলেন, ‘ওর আয়েই আমাদের সংসার চলত। আমরা অত্যন্ত অসহায়। স্বামীর কিভাবে মৃত্যু হয়েছে, তার সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’ ওই এলাকার বাসিন্দা তথা নিলডি পঞ্চায়েতের সদস্য বাবলু মণ্ডল বলেন, ‘তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ঠিকাদার সংস্থা নতুন প্রজেক্টের কাজ করছে। সেই কাজে মাটির নীচ থেকে বড় বড় পাথর উঠছে। সেগুলি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাইরে একটি জায়গায় জড়ো করে রাখা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে ওই কোম্পানির কোনও লোক থাকছে না। ফলে, দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা দাবি রেখেছিলাম সাইডে কিছু ছেলেকে নিয়োগ করতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কথা শোনেনি।’ যদিও বিষয়টি নিয়ে সরকারিভাবে রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তরফে কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে, নাম প্রকাশ প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাইরে ঘটনা। ওই যুবক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মচারীও ছিলেন না। কারখানার বাইরে কোনও ঘটনা হলে কর্তৃপক্ষ কি করবে। আমরা চাই ঘটনার তদন্ত হোক।