জিলিপি হাতে ড্রাগন ট্রেনে সেলফি, বাগবাজারে উল্টোরথে মহা ধুমধাম
বর্তমান | ০৬ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলম্বাস নৌকা। ব্রেক ডান্স। ড্রাগন ট্রেন। নাগরদোলা। মোট ছ’রাউন্ড ঘোরানো হবে। খরচ ৫০ টাকা। তার সামনের দোকানে দু’ধরনের জিলিপি তৈরি হচ্ছে, একটি ময়দার অন্যটি চালের। তার পাশে আছে খাজা আর গজা। পাশের দোকানে হরেক মাল ১০ থেকে ৫০ টাকা। এ সব নিয়ে বাগবাজারে জমে উঠেছে রথের মেলা। আর মাত্র দু’দিন। কলকাতার বুকে এ হেন মেলা খুব বেশি হয় না। তাই ঘুরতে হাজির আট থেকে আশি। এসি ক্যাফের আরাম। রেস্তরাঁর আমেজ ছেড়ে মানুষ সময় কাটাতে আসছেন রথের মেলায়। কেউ বলছেন, ‘নস্টালজিয়ার টানে আসি।’ কেউ আসছেন রিলস তৈরির ঝোঁকে। বহু শহুরে বাবা-মা সন্তানদের নিয়ে এসেছেন মেলা বস্তুত আসলে কি তা চেনাতে।
শনিবার উল্টোরথে বিকেল থেকেই বাগবাজার লোকে লোকারণ্য। তরুণ-তরুণীদের হাতে স্মার্টফোন। বড় রাস্তা থেকে ভিডিও করতে করতে মেলায় ঢুকছেন তাঁরা। কেষ্টপুর থেকে এসেছিলেন অস্মিতা চৌধুরী। বললেন, ‘আমরা তো এসেছি রিলস বানাব বলে। বকুলতলায় ভিড় জমেছে-গানটার সঙ্গে রিলস বানাব। তাই একটু ফাঁকায় ফাঁকায় এলাম।’ মেলা বসেছে আর লটারি খেলা হবে না, এমন হয় না। বল ছুড়ে পাঁচখানা গ্লাস ফেলে দিলেই আকর্ষণীয় পুরস্কার। সেখানে বেজায় ভিড়। মেলাতে কাঁচরাপাড়ার ঘুঘনির পাশাপাশি হাল সময়ের ব্র্যান্ডেড খাবারের আউটলেট বসেছে। বাগবাজারের কৌশিক মিত্র নিজের ছোট ছেলেকে নিয়ে এসেছেন। বললেন, ‘আমাদের ছোটবেলায় মেলায় ফুচকা, টিকিয়া, ঘুগনি খাওয়ার চল ছিল। সে মজাই আলাদা। এখানে এসে ওই খাবারগুলো খুঁজে পেলাম। ছেলেকে খাওয়াব।’
বাচ্চাদের চোখ যদিও খাবারের থেকে বেশি টেডি বিয়ার, কার্টুন চরিত্রের চাবির রিং, বন্দুকের দিকে। কিন্তু লাইট ঝিকঝিক চাবির রিং যদি বাড়ি গেলেই বন্ধ হয়ে যায়? বাবাদের চিন্তা তা নিয়ে। এদিকে দোকানের সামনে বড় বড় করে লেখা, ‘বিক্রি হওয়ার পর মাল ফেরত হয় না।’ তাই বাবা-মায়েরা দরদাম চালিয়ে গেলেন। আর খুদে টেনশনের চোখে বাবা-মাকে দেখেই গেল। জিলিপি বিক্রেতারা বললেন, ‘লোকজন মোটামুটি ভালোই হচ্ছে। বিক্রি খারাপ নয়।’ জিলিপি হাতে নিতে না নিতেই মাথার উপর দিয়ে চলে গেল কলম্বাস নৌকা। ফলে তর সইল না। সেলফি ওই নৌকার উপরেই নেবে সদ্য প্রেমে পড়া তরুণ-তরুণী। যেতে যেতে বললেন, ‘পুজোর আগে ট্রেলার হয়ে গেল।’ তবে খুদেদের চাবির রিং, টেডি নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। তাই কেনাকাটা শেষ করে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রাকে প্রণাম করার পর খেলনার দীর্ঘজীবন কামনা করল। তারপর বেরল মেলা ছেড়ে।-নিজস্ব চিত্র