টাকার বিনিময়ে ভুয়ো নথি দিয়ে আধার কার্ড তৈরির প্রমাণ মিলছে। ‘ফেলো কড়ি’, মিলবে কার্ড!’— এই চর্চা এখন রাজনৈতিক বিতর্ক ছাপিয়ে ঢুকে পড়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অন্দরেও। এই পরিস্থিতিতে জেলায় জেলায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকেরা আধার কার্ড এবং প্যান কার্ডকে প্রামাণ্য নথি হিসেবে গণ্য করতে চাইছেন না। এ নিয়ে জেলায় জেলায় বুথ লেভেল অফিসার, ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও), এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (এইআরও)-দের তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট বার্তাও দিয়েছেন বলে খবর।
প্রশাসনের খবর, বিএলও, ইআরও এবং এইআরও-দের বলা হয়েছে যে এখন থেকে ভোটার কার্ডে বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রে আধার কার্ডকে প্রামাণ্য নথি হিসেবে গ্রহণ করা হবে না। সেই প্রমাণ কেউ দাখিল করলে, তা পুরোপুরি বাতিল করে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে বড়জোর প্যান কার্ড গ্রহণযোগ্য। কিন্তু নতুন ভোটার কার্ড পেতে কোনও আবেদনকারী যদি আধার বা প্যান কার্ড প্রমাণ হিসেবে দাখিল করতে চান, তার কোনওটিই গ্রহণ করা যাবে না। বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট চিরাচরিত প্রমাণপত্রের (যেমন, জন্মের শংসাপত্র, অনুমোদিত বোর্ডের অ্যাডমিট কার্ড, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের থেকে দেওয়া শংসাপত্র) কোনও একটি জমা নিতে হবে। যা থেকে প্রমাণিত হয়, আবেদনকারী এ দেশেই জন্মগ্রহণ করেছেন অথবা বাসিন্দা। নির্বাচনের কাজে যুক্ত এক কর্তা বলেন, “আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে না। তাই এই সিদ্ধান্ত।”
প্রশাসনের একাংশের মতে, এ দেশের নাগরিক না হওয়া সত্ত্বেও ভারতের ভোটার কার্ড পেয়ে যাওয়ার বহু প্রমাণ পেয়ে নড়ে বসেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তাতে জেলাশাসক থেকে এইআরও পর্যন্ত সকলকে দায়বদ্ধ করা হচ্ছে। অসাধু উপায়ে ভোটার কার্ড তৈরির সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে তিন জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে মামলা এবং তাঁদের একজন নিলম্বিতও (সাসপেন্ড) হয়েছেন।
এক জেলাস্তরের কর্তার কথায়, “আধার কার্ড যে অসাধু উপায়ে পাওয়া যাচ্ছে, তা মোটামুটি প্রমাণিত। ফলে পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে ওই কার্ডকে মান্যতা দেওয়া খুব ঝুঁকিপূর্ণ। সেই কারণেই প্রত্যেক নির্বাচনী আধিকারিক-কর্মীদের বলে দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাঁরা আধার কার্ড প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ না করেন। পাশাপাশি, কমিশনের তরফেও নথি নিয়ে বেশ কড়াকড়ি হচ্ছে।”