কার্তিক মহারাজ ‘সন্ন্যাসীদের কলঙ্ক’, সুবিচারের দাবি নির্যাতিতার বাবা-মায়ের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৬ জুলাই ২০২৫
বেলডাঙার ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রধান স্বামী প্রদীপ্তানন্দজি ওরফে কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ক্রমশ বাড়ছে। এবার সরব হলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। রবিবার তাঁরা সোশাল মিডিয়ায় কার্তিক মহারাজ ‘সন্ন্যাসীদের কলঙ্ক’-কে বলে আক্রমণ করেন।
নির্যাতিতার বাবা মুর্শিদাবাদের নওদা থানার অন্তর্গত এলাকার একজন পরিচিত বিজেপি নেতা। তিনি বলেন, ‘১৪-১৫ বছর আগে আমাদের সঙ্গে কার্তিক মহারাজের পরিচয় হয়। তখন থেকেই আমাদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল মহারাজের। সেই সূত্রেই আমার মেয়ের সঙ্গে পরিচয়।’ তাঁর অভিযোগ, সেই সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে কার্তিক মহারাজ তাঁদের মেয়ের উপর দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক নির্যাতন চালান।
মেয়ের প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার সুবিচার দাবি করেছেন তাঁরা। নির্যাতিতার বাবার দাবি, ‘যিনি সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে মেয়েদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে পারেন, তিনি সন্ন্যাসীদের অপমান। তাঁর মতো মানুষের উপস্থিতি বিজেপির ভাবমূর্তিরও ক্ষতি করবে।’
সম্প্রতি এক মহিলা কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন। তাঁর দাবি, ২০১৩ সালে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসে মহারাজ তাঁকে মুর্শিদাবাদের চাণক্য এলাকায় একটি আশ্রমের প্রাথমিক স্কুলে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে শিক্ষিকা পদে নিযুক্ত করেন। সেখানেই আশ্রমে থাকার ঘরও দেওয়া হয়। তাঁর অভিযোগ, এক রাতে কার্তিক মহারাজ ঘরে ঢুকে তাঁকে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন। বাধ্য হয়ে তিনি রাজি হন। তারপর দিনের পর দিন শারীরিক নির্যাতন চলে বলে দাবি মহিলার।
একসময় ওই মহিলা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। তারপর মহিলাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মাসে মাসে বেতন পৌঁছে যাবে বাড়িতে, ন্যক্কারজনক এই ঘটনার পর এমনটাই বলা হয়েছিল মহিলাকে। অভিযোগ, সেই প্রতিশ্রুতিও রাখেননি কার্তিক মহারাজ। বরং বহরমপুরের একটি নার্সিংহোমে জোর করে নির্যাতিতার গর্ভপাত করানো হয়। নার্সিংহোমের মালিক তথা চিকিৎসক এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ও আরেক মহিলার উপস্থিতিতে তাঁর গর্ভপাত করানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতা।
গোটা ঘটনায় নবগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মহিলা। তবে হাজিরা এড়াতে কার্তিক মহারাজ কলকাতা হাইকোর্টে গিয়ে অভিযোগ খারিজের আবেদন জানান। কার্তিক মহা্রাজের বক্তব্য, ‘১৩ বছর আগের অভিযোগে থানায় এফআইআর করা হয়েছে। এটা সাধুসন্তদের বিরুদ্ধে আক্রমণ।’ হাইকোর্টে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত মামলাটি গ্রহণ করে শুনানির দিন ধার্য করেন। ইতিমধ্যেই দু’দিন শুনানি হয়েছে। আগামী সোমবার ফের শুনানি হওয়ার কথা।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই রাজনীতির জল ঘোলা হচ্ছে। একদিকে, নির্যাতিতার বাবা বিজেপির পরিচিত মুখ হওয়ায় ঘটনাটির প্রভাব দলের অভ্যন্তরেও পড়ছে। অন্যদিকে, মহারাজের সন্ন্যাসী পরিচয়ের আড়ালে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগও উঠছে।
প্রসঙ্গত, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের বেলডাঙা শাখার সন্ন্যাসী স্বামী প্রদীপ্তানন্দ ওরফে কার্তিক মহারাজ। চলতি বছর আধ্যাত্মিকতায় পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন কার্তিক মহারাজ। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে, মুর্শিদাবাদে কার্তিক মহারাজকে কটাক্ষ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মে মাসেও বহরমপুরে এসে জেলা প্রশাসনিক কার্যালয়ে দাঁড়িয়ে নাম না করেই কার্তিক মহারাজকে ফের নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বহুবার বাংলায় শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন কার্তিক মহারাজ।