• বাবা ভাগচাষি, আইআইটি জ্যামে ১২৬ র‌্যাঙ্ক ছেলের, দুঃস্থ নীলাঞ্জনের পাশে থাকা নিয়ে দুই ফুলের জোর লড়াই
    বর্তমান | ০৭ জুলাই ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বালুরঘাট: বাবা ভাগচাষি। দুঃস্থ পরিবার। কোনওরকমে দিন গুজরান হয়। এই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে সর্বভারতীয় আইআইটি জ্যামে ১২৬ র‌্যাঙ্ক করেছেন বালুরঘাটের নীলাঞ্জন মণ্ডল। কিন্তু, তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণে বাধা আর্থিক সঙ্কট। নীলাঞ্জনের বাবা যোগেশ মণ্ডলের হাতে ছেলেকে কলেজে ভর্তি করার টাকা নেই। বিষয়টি জানাজানি হতেই পাশে দাঁড়িয়েছেন বালুরঘাটের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। একইভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরাও। এই ‘পাশে থাকা’ নিয়ে কার্যত দড়ি টানাটানি দুই ফুলের। রবিবার একই দিনে এক ঘণ্টার ব্যবধানে নীলাঞ্জনের বাড়িতে হাজির হয় দুই পক্ষ। একদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত ও বিজেপি নেতৃত্ব, অন্যদিকে তৃণমূলের বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অরূপ সরকার, আরটিও বোর্ডের সদস্য মফিজউদ্দিন মিয়াঁ। মুখোমুখি হয়ে উভয়পক্ষই কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেও চলল আনুষ্ঠানিক সৌজন্য বিনিময়। পরে একে অপরকে কটাক্ষ। দুস্থ ছাত্রের কে বেশি আপন? তা প্রমাণ করতে মরিয়া দুই দলই। 

    বালুরঘাট ব্লকের ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের বালিন্দর এলাকার নীলাঞ্জন ফেব্রুয়ারি মাসে আইআইটি জ্যাম পরীক্ষায় বসেছিল। মার্চ মাসে পরীক্ষার ফলাফল বের হয়। আইআইটি রুরকিতে ভর্তির সুযোগ পান নীলাঞ্জন। তার বাবা চাষ করেন। টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরে বড় হয়েছেন নীলাঞ্জন। তার লড়াইয়ের কথা জানতে পেরে সুকান্ত মজুমদার দুপুর সাড়ে ১২টায় ওই ছাত্রের বাড়িতে যান। তৃণমূল নেতৃত্ব তার আগেই দুপুর সাড়ে ১১ টাতেই ওই বাড়িতে ঢুকে গিয়েছিল। সুকান্ত যেতেই পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্রকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কেমন আছেন?’। পালটা ভালো বলে অশোকবাবুও জিজ্ঞেস করেন ‘কেমন আছেন?’ 

    এরপরেই তৃণমূল নেতৃত্ব ছাত্রের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে সুকান্তকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষ করেন। অশোক বলেন, টাকার অভাবে কারও স্বপ্ন পূরণ হবে না, এটা মানা যায় না। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এসেছিলাম। তাঁকে সবরকম সাহায্যের পাশাপাশি ভর্তির ব্যবস্থা করে দেব জানিয়েছি। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও জানাচ্ছি। চেয়ারম্যান বলেন,আমরা আগেই এসেছি। তারপর সুকান্তবাবুরা আসেন। অনেকেই আসবেন এটা স্বাভাবিক। তবে আগে দেখেছি, কামারপাড়ার এক বিশেষভাবে সক্ষম দুঃস্থ ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে অনেকেই ছবি তুলে এসেছেন। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। পরে আমরাই তাকে সাহায্য করেছিলাম।  

    পাল্টা সুকান্ত মজুমদার বলেন, নীলাঞ্জনের পরিবারের সঙ্গে আমার আগেই কথা হয়েছে। আর্থিক সঙ্কটের কথা শুনেই আইআইটি রুরকির অ্যালুমনি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কথা বলে সেখানে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। নীলাঞ্জনের ভর্তির জন্য ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা আমার মন্ত্রক থেকেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। পূর্ব নির্ধারিত সময়ে আমার আসার কথা। কিন্তু সেই খবর পেয়ে আগ বাড়িয়ে তৃণমূলের নেতারা এসেছেন। তাঁরা আজকে কী করতে এসেছেন? যদি সাহায্য করতেই আসেন, তাহলে আগেও তো আসতে পারতেন। তৃণমূল সাহায্য করতে আসেনি, পাশে থাকার নাটক করে  রাজনীতি করতে এসেছে।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)