মালিকের থেকে ভাড়ায় নিয়ে গাড়ি বিক্রি! গ্রেপ্তার মাস্টার মাইন্ড সহ ৩
বর্তমান | ০৭ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া নিয়ে পরে তা প্রকৃত মালিকের অজান্তে বিক্রি করে দেওয়া চক্রের পর্দাফাঁস করল প্রধাননগর থানার পুলিস। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তথা চক্রের মাস্টারমাইন্ড সোমনাথ মুখোপাধ্যায় সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ইতিমধ্যে ডুয়ার্স ও শিলিগুড়ি থেকে মোট ১৪ টি গাড়ি পুলিস উদ্ধার করেছে।
পুলিস জানিয়েছে, ধৃত বাকিরা হল পাপ্পু ঝা, নীতিন প্রধান ও রাজ নার্জিনারি। পাপ্পুর বাড়ি ডুয়ার্সের বানারহাটে। বাকিরা নাগরাকাটার বাসিন্দা। মাস্টারমাইন্ড সোমনাথের বাড়ি কলকাতার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে হলেও কয়েক বছর সে শিলিগুড়ির চম্পাসারির সমরনগরে থাকছিল। তদন্তকারী অফিসারদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়ি ভাড়া নেওয়ার জন্য নিজস্ব একটি অ্যাপ বানায় সোমনাথ। সেই অ্যাপ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেয়। যাদের গাড়ি আছে, তারা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করে ভাড়া খাটিয়ে রোজগার করতে পারবে, এমন প্রলোভন দেখায়। অনেকেই আগ্রহী হয়ে সোমনাথের পাতা ফাঁদে পা দেন। গাড়ি ভাড়ায় যাওয়ার পর মোটা কমিশন দেওয়া শুরু করে সোমনাথ। অনেকেই বিশ্বাস করে একে একে সোমনাথকে গাড়ি দেওয়া শুরু করেন। প্রথম প্রথম ভাড়ার টাকা সময়মতো পেলেও কিছুদিন পর থেকে গাড়ির কোনও ঠিকানা পেতেন না মালিকরা। সোমনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সে টালবাহানা করত। পরবর্তীতে সে গাড়ির মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে থাকে।
সম্প্রতি প্রধাননগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন গাড়ির এক মালিক। এরপরেই তদন্তে নেমে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় তদন্তকারীদের। একে একে নাগরাকাটা এবং শিলিগুড়ি থেকে ১৪ টি গাড়ি উদ্ধার করে পুলিস। যার প্রত্যেকটির মালিক তাঁদের গাড়ির হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সোমনাথকে শনিবার গ্রেপ্তার করে পুলিস। এরপর তাকে জেরা করে বাকি তিনজনকে ধরা হয়।
প্রধাননগর থানার আইসি বাসুদেব সরকার রবিবার বলেন, আন্তঃজেলা এবং আন্তর্জাতিক গাড়ি পাচার চক্রের পান্ডা সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র রাজ্যের মধ্যেই নয়, প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল সীমান্তেও বহু গাড়ির জিপিএস লোকেশন ট্র্যাক করা গিয়েছে। ১৪ টি উদ্ধার হলেও, অন্ততপক্ষে দু’শো গাড়ি পাচার করার পিছনে এই চক্রের হাত আছে। মালিকের অজান্তে বিক্রিও করে দেওয়া হয়েছে প্রচুর গাড়ি। একে একে বহু অভিযোগ থানায় জমা পড়ছে। সেসব অভিযোগ তদন্ত করলে আরও বেশকিছু তথ্য হাতে আসবে বলে দাবি তদন্তকারীদের। অফিসারদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে উত্তরবঙ্গজুড়ে গাড়ি চুরি এবং পরে তা পাচার করে দেওয়ার কাজ করছিল এই চক্র। দু’বছর ধরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছিল। অবশেষে চক্রের মাস্টারমাইন্ডকে ধরা গিয়েছে। ধৃতদের জেরা করে বাকি গাড়িগুলি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিস।