নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: গত ছ’মাসে জলপাইগুড়ি জেলায় ২৩৮টি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর এই দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ৬৩ জনের। গত বছরের চেয়ে সংখ্যাটা অবশ্য কিছুটা হলেও কম।
ট্রাফিক পুলিস সূত্রে খবর, গতবার জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত জেলায় ২৬২টি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তাতে প্রাণ হারান ৮২ জন। এবার দুর্ঘটনা রোধে বছরের প্রথম থেকে কড়া পদক্ষেপ নেয় জেলা পুলিস। তারই জেরে কিছুটা হলেও দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো গিয়েছে বলে দাবি ট্রাফিক পুলিসের কর্তাদের।
রবিবার জলপাইগুড়ি জেলা পুলিস সুপার খণ্ডবাহলে উমেশ গণপত বলেন, বছরের প্রথম ছ’মাসে জেলায় গতবারের তুলনায় এবার ৯ শতাংশ পথ দুর্ঘটনা কমানো গিয়েছে। একইসঙ্গে দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু কমানো সম্ভব হয়েছে ২৩ শতাংশ। তাঁর দাবি, জেলার ১৫টি ব্ল্যাকস্পটের প্রতিটি জায়গাতেই বিশেষ পদক্ষেপ করা হয়েছে। তাছাড়া ট্রাফিক আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ট্রাফিক আইন না মানায় চলতি বছরে জুন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি ক্ষেত্রে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে।
পুলিসের তথ্য বলছে, গতবছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে জলপাইগুড়ি জেলায় ৫০৪টি দুর্ঘটনা নথিভুক্ত হয়। মৃত্যু হয় ১৪১ জনের। জখম হন ৬৩০ জন। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ওই বছর জলপাইগুড়ি জেলায় ৪৬৩টি পথ দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৫২ জনের। জখম হন ৫১৮ জন। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ’২৩ সালের তুলনায় গতবছর জলপাইগুড়ি জেলায় পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমানো গেলেও সার্বিকভাবে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। ফলে এবছর জেলায় দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঠেকানোই পুলিসের কাছে চ্যালেঞ্জ।
বছরের প্রথমেই এসপি ট্রাফিক পুলিসকে জানিয়ে দিয়েছেন, গতবারের তুলনায় এবছর অন্তত দুর্ঘটনার সংখ্যা ১০ শতাংশ কমাতেই হবে। ফলে জানুয়ারি থেকেই দুর্ঘটনা রোধে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলপাইগুড়ি ট্রাফিক পুলিস। হাইওয়ে এবং শহরের রাস্তার পাশাপাশি দুর্ঘটনা রুখতে নজরদারি বাড়ানো হয় গ্রামের রাস্তায়। যদিও বছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জানুয়ারিতেই জেলায় ঘটে যায় ৪৪টি পথ দুর্ঘটনা। এর জেরে ১২ জনের মৃত্যু হয়। এরপরই আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয় ট্রাফিক পুলিসের তরফে। ব্ল্যাকস্পটে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। স্পিড ব্রেকার ও ট্রাফিক ব্যারিয়ারের পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। জেলায় ১১টি ট্রাফিক গার্ড চালু করা হয়েছে। বহু রাস্তায় নতুন করে বসানো হয়েছে ট্রাফিক সিগন্যাল। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে ট্রাফিক বুথ করা হয়েছে। হাইওয়েতে সারাক্ষণ ট্রাফিক পুলিস মোতায়েন থাকছে। এছাড়াও পথ নিরাপত্তা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।
ডিএসপি (ট্রাফিক) অরিন্দম পালচৌধুরী বলেন, দুর্ঘটনার কথা আগে থেকে তো বলা যায় না। আমরা রোজ চেষ্টা করে চলেছি, যাতে দুর্ঘটনা ঠেকানো যায়। গতবারের তুলনায় এখনও পর্যন্ত কিছুটা হলেও দুর্ঘটনা কমানো গিয়েছে।