নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: কাটোয়ায় জঙ্গলরাজের পতন অনেক আগেই হয়েছে। তারপরও আতঙ্ক ছড়াতে তার নামটাই যথেষ্ট। এখন সে কাটোয়ার বাইরে। এই শহর এখন দেখছে ‘লালবাবু’দের দাপট। তাদের কী ছিল আর কী হল, সেটাই এখন শহরের চর্চার বিষয়। প্রাচীন এই জনপদের বাসিন্দারা বলছেন, তাদের ফুলেফেঁপে ওঠার পিছনে রয়েছে অজয়ের বালির ঘাটের আশীর্বাদ। তার জোরেই একসময়ের কুঁড়েঘরের মালিকদের বাড়িতে বসেছে সেন্সার। ঝাঁ চকচকে প্রাসাদসম বাড়ি। এখন দামি চারচাকা গাড়ি চড়তে অভ্যস্ত তারা। ছুটি কাটাতে যায় কাশ্মীর। বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলি যেন তাদের নিজের ‘পাড়া’ হয়ে উঠেছে। ইচ্ছে হলেই তারা সেখানে হাজির হয়ে যায়। অজয়ের পাড়ে কান পাতলে শোনা যায়, এসব নানা কাহিনি। তবে সবটাই শুনতে হয় চুপিসারে। প্রকাশ্যে এই লালবাবুদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে রেহাই নেই। নীরবে চলতে থাকে অপারেশন।
স্থানীয়রা বলছেন, অজয়ের বালিঘাট যতদিন থাকবে, ততদিনই এরকম নতুন নতুন লালবাবুদের দেখা যাবে কাটোয়ায়। অজয় নদ যে যত বেশি দখল করতে পারবে, সে তত টাকার মালিক হয়ে উঠেবে। তাই রাজুয়া গ্রামে বোমা বিস্ফেরণের ঘটনায় অবাক হচ্ছেন না এলাকার বাসিন্দারা। অতীতে এরকম বহু ঘটনার সাক্ষী থেকেছে কাটোয়া। বোমা, পিস্তল হাতে না থাকলে অজয়ে অবৈধ কারবার চালানো যায় না। কাটোয়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, রাজুয়া গ্রামের পাশেই রয়েছে বালিঘাট। অজয়ের চর দখলের পাশাপাশি চাষিদের একাংশের জমি দখলেরও চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। অবৈধ কারবার রুখতে পূর্ব বর্ধমান জেলাপ্রশাসন যথেষ্টই তৎপর। এবছর জেলার অন্যান্য প্রান্তে অবৈধ বালির কারবার চলেনি। সেই ওভারলোডিংয়ের ছবিও এবছর দেখা যায়নি। জেলা পুলিস ও প্রশাসন যথেষ্টই কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু, অজয়ের পাড়ে স্থানীয়ভাবে ‘ম্যানেজ’ এর চল বহু দিন ধরেই রয়েছে। সেই জঙ্গল শেখের আমল থেকে তা শুরু হয়েছে। সেই প্রবণতা এখনও চলছে। মাঝে কিছুদিন কাটোয়া শান্ত ছিল। সেই সময় জঙ্গল জেলে বন্দি দশা কাটাচ্ছিল। লালবাবুরাও ফাঁকা ময়দান পেয়ে নীরবে কারবার চালিয়ে যাচ্ছিল। এখন জঙ্গল জেলে না থাকলেও তার গ্যাং আবার নতুন করে এলাকা দখলের পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ। রাজুয়া গ্রামে বোমা বিস্ফোরণের পিছনেও জঙ্গলদের হাত রয়েছে বলে অনেকেই দাবি করেছে। জঙ্গল আত্মগোপন করে থাকায় এনিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে কাটোয়ার অপরাধ জগতে যাঁরা খবর রাখেন তাঁরা বলছেন, বাইরে থেকেই জঙ্গল কলকাঠি নাড়ানোর চেষ্টা করছে। এলাকায় আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য সে লোকজনদের দিয়ে বোমা বাঁধাচ্ছিল। তবে এখন শুধু জঙ্গল নয়, লালবাবুরাও যথেষ্ট শক্তিশালী। সেই কারণে রাজুয়া গ্রামে বোমা বিস্ফোরণের পর অনেকেই কাটোয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে। আশঙ্কা, যদি সত্যি হয় তাহলে আবার ভাগরথীর পাড়ে ‘জঙ্গলরাজ’ এর পুরনো ছবি দেখা যাবে বলে অনেকেই আশঙ্কিত।-নিজস্ব চিত্র