• ইউনিয়ন নেতাদের ঢালাও নিয়োগ, প্রতিবাদে কলেজে যাচ্ছেন না গভর্নিং বডির সভাপতি
    বর্তমান | ০৭ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: এগরা সারদা শশীভূষণ কলেজে মোট অস্থায়ী কর্মী ৩২জন। তাঁদের মাইনে দিতে প্রতি মাসে কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকে খসে যায় আড়াই লক্ষ টাকা! ওই কর্মীদের অধিকাংশই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হোমড়াচোমড়া নেতা। জেলার মধ্যে একমাত্র এই কলেজে ছাত্র সংসদের পাঁচজন জিএস(জেনারেল সেক্রেটারি) নিজের কলেজে চাকরি পেয়েছেন। তাঁরা সকলেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা ছিলেন। এছাড়াও সংগঠনের ইউনিট প্রেসিডেন্ট সহ নানাস্তরের ছাত্রনেতাদের ওই কলেজে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। কলেজে জলের দরে জমি বিক্রির ঘটনায় অভিযুক্ত প্রিন্সিপাল দীপককুমার তামিলির মেয়াদকালে এই নিয়োগ হয়েছে। 

    গত ৩১জানুয়ারি দীপকবাবু প্রিন্সিপাল পদ থেকে অবসর নেন। তার দু’মাস আগে ওই কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট সভাপতি পিকু জানা, সংগঠনের ব্লক ও শহরের নেতা বুবাই জানা, শেখ সোহেল, শেখ আবেদ, নান্টু বেরা ও প্রীতম মাইতিকে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। মাসিক ছ’হাজার টাকা বেতনে এই নিয়োগের তীব্র আপত্তি করেন এগরার বিধায়ক তথা ওই কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি তরুণকুমার মাইতি। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, কলেজে বিপুল অস্থায়ী কর্মীর মাইনে দিতে এমনিতেই তহবিলের অবস্থা ভাঁড়ে মা ভবানী। এরপরও ঢালাও নিয়োগ হলে কলেজ দেউলিয়া হয়ে যাবে। তাই তিনি ওই ছ’জন ছাত্র নেতার নিয়োগ মানেননি। তাঁদের মাইনের চেকে সই করা বন্ধ করে দেন।

    এদিকে ওই ছাত্রনেতারা জেলার এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ। তাঁদের মাইনে বন্ধ হওয়ায় টিচার ইনচার্জের উপর চাপ আসতে শুরু করে। উভয়সঙ্কটে পড়ে গত ২৯মে টিচার ইনচার্জ চয়ন রঞ্জিত আচমকা ইস্তফাপত্র দিয়ে দেন। যদিও ১জুন গভর্নিং বডির মিটিংয়ে তরুণবাবুর হস্তক্ষেপে চয়নবাবু ফের দায়িত্বে ফেরেন।

    এই মুহূর্তে এগরা সারদা শশীভূষণ কলেজের অস্থায়ী কর্মী হিসেবে আছেন সত্য চক্রবর্তী। তিনি এগরা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতিও। একদা কলেজে ছাত্র সংসদের জিএস ছিলেন। এখানকার আরও এক অস্থায়ী কর্মী শিবু মাইতি ওই কলেজের প্রাক্তন জিএস। কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন জিএস উদয় পাল অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কলেজে চাকরি পান। পরবর্তীতে তাঁর নিয়োগ স্থায়ী করা হয়। তিনি শহর তৃণমূলের সভাপতিও। শাশুড়ির নামে নিজের কলেজের জমি জলের দরে কিনে বিতর্কে জড়ান। এছাড়াও তুফান ত্রিপাঠী একসময় এগরা কলেজের জিএস ছিলেন। এখন কলেজের কর্মী। আরও এক প্রাক্তন জিএস গৌতম আচার্য আংশিক সময়ের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। এখন ওই কলেজের স্যাক্ট টিচার হিসেবে কর্মরত।

    শুধু ছাত্র সংসদের জিএস নয়, ছাত্র ইউনিয়নের হোমড়াচোমড়া নেতাদের একচেটিয়া কলেজে নিয়োগ করা হয়েছে। পিকু জানা, বুবাই জানাদের নিয়োগ কোনও অবস্থায় মানবেন না বলে এগরার বিধায়ক সাফ জানানোর পরই তাঁদের মাইনে আপাতত দু’মাস বন্ধ। ওই ছ’জনের মধ্যে তিনজন এখনও কলেজে যাচ্ছেন। তরুণবাবু ১জুন কাঁথিতে নিজের বাড়িতে গভর্নিং বডির মিটিং করে জানিয়েছেন, তিনি আর কলেজে যাবেন না। কোনওরকম চেকেও সই করবেন না। তারপর কলেজের যাবতীয় চেকে সই করছেন গভর্নিং বডির সরকারি প্রতিনিধি বাদলঅশ্রু ঘাঁটা ও টিচার ইনচার্জ। বাদলবাবু বলেন, ওই ছ’জনের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। এগরার বিধায়ক বলেন, আমি এনিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)