কলকাতার হাজরা ল কলেজে গণধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র-র ওই কলেজেই চাকরিপ্রাপ্তি নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। ‘প্রভাবশালী’দের লেখা ‘চিরকুট’-এই ২০২৪ সালে কলেজের পরিচালন সমিতি মনোজিৎকে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করে বলে অভিযোগ। পূর্ব মেদিনীপুরেও একাধিক সরকারি কলেজে এমন অনেক তৃণমূল ছাত্রনেতা কাজ করছেন যাঁদের চাকরি নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে তাঁদের ঘাঁটাতে সাহস পান না।
হলদিয়া মহকুমার নন্দীগ্রাম সীতানন্দ কলেজ এবং মহিষাদল রাজ কলেজের কথা ধরা যাক। ২০২৩ সালে সীতানন্দ কলেজে দুই প্রাক্তন ছাত্রকে কলেজের অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। অভিযোগ, কোনওরকম বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই শুধুমাত্র শাসক দলের প্রভাব খাটিয়ে তাঁরা কলেজে চাকরি পেয়েছে। এঁদের অন্যতম বর্তমানে সীতানন্দ কলেজের ইউনিট সভাপতি সুমিত মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য,"আমার নিয়োগের সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনওরকম বিজ্ঞাপন দেননি, তবে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম।’’ কত জন মৌখিক পরীক্ষা দেন জিজ্ঞাসা করায় সুমিতের উত্তর, ‘‘আমরা দু’জন দিয়েছিলাম, দু’জনেই চাকরি পেয়েছি। আমি দুঃস্থ বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন!" যদিও নন্দীগ্রাম সীতানন্দ কলেজের অধ্যক্ষ সামু মহালীর কথায় ,"গায়ের জোরে নিয়োগ হয়েছে।"
মহিষাদল রাজ কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, ২০১৫ সালে রসায়ন বিভাগের গবেষণাগার-সহায়ক পদে নিযুক্ত হন কলেজের প্রাক্তন ছাত্রনেতা সুরেন্দু মান্না। অভিযোগ, সুরেন্দুর এতটাই প্রভাব যে, কলেজে তাঁর আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠান হয়েছে! সুরেন্দুর কথায়,"২০১৫ সালে মৌখিক পরীক্ষা দিই। আমার সঙ্গে কতজন পরীক্ষা দিয়েছিলেন, মনে পড়ছে না। তবে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল।" কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম কুমার মাইতি এ ব্যাপারে ফোন ধরেননি। কলেজের পরিচালন কমিটির সভাপতি আবু তাহের বলেন,"ওঁদের নিয়োগের সময় আদালতের নির্দেশে জেলার বাইরে ছিলাম। বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই পরিচালন সমিতির সভা ডাকা হবে।’’
রামনগর কলেজে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের বেশ কয়েকজন পদাধিকারী অস্থায়ী কর্মী হিসেবে চাকরি করেন। অভিযোগ, তাঁদের নিয়োগও সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে কোনও বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই হয়েছে। এঁদের মধ্যে টিএমসিপির জেলা সভাপতি শতদল বেরা-র নাম উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া, রামনগর -২ ব্লক টিএমসিপি সভাপতি চন্দন পুলাই, ইউনিট সভাপতি শেখ মইদুল, যুব নেতা রাজকুমার জানাও রয়েছেন ওই তালিকায়।
চন্দন আর রাজকুমারের বিরুদ্ধে একটি গণধর্ষণের মামলায় গত বছর কাঁথি মহকুমা আদালতে চার্জশিট দিয়েছে রামনগর থানার পুলিশ। কলেজের মেসে ঢুকে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ রয়েছে দু’জনের বিরুদ্ধে। চন্দন কলেজের অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট। এই মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরেও কী করে তিনি কলেজে চাকরিতে বহাল রয়েছেন?
জবাবে কলেজের পরিচালন কমিটির সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি বলেন,"এই দু’জন কোনওদিন জেলে ছিলেন না। এখন বিচারপ্রক্রিয়া চলছে। বিচারে এঁরা দোষী প্রমাণিত হলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে, তার আগে নয়।’’ ডিএসও-র রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়ের অভিযোগ,"ধর্ষকরাই তৃণমূলের সম্পদ। তাই কলেজে ওদের বহাল তবিয়তে চাকরিতে রাখা হয়েছে।’’