• প্রাক্তনীদের কাণ্ডে লজ্জিত শিক্ষকেরা, খুলল আইন কলেজ, বিধি থাকা সত্ত্বেও পরিচয়পত্র আনতে ভুললেন অনেকেই
    আনন্দবাজার | ০৭ জুলাই ২০২৫
  • খাস কলকাতার কলেজ ক্যাম্পাসেই ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় শিক্ষামহল। প্রাক্তন ছাত্র এবং অস্থায়ী কর্মীর ‘এম’-এর কুকীর্তিতে লজ্জিত অধ্যক্ষ-অধ্যাপকেরা। সোমবার কসবার আইন কলেজ ফের খোলার পর সেই ভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাঁদের চোখে মুখে। একই সঙ্গে কলেজের পরিবেশ স্বাভাবিক করতে তৎপর কর্তৃপক্ষ। তাই, কলেজ খোলার আগে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের নিয়ে ১৫ মিনিট অনলাইনে বৈঠক করেন উপাধ্যক্ষ।

    ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় আতঙ্কিত পড়ুয়া এবং অভিভাবকেরাও। চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র সৌম্যদীপ মিত্র সোমবার তাঁর বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে কলেজে আসেন। তাঁরা আতঙ্কিত বলে জানান। পাশাপাশি ইউনিয়ন-রুম বন্ধ রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। না হলে সমস্যা বাড়বে বলেই দাবি তাঁদের।

    তবে, ক্যাম্পাসে প্রাক্তনী বা বহিরাগতদের দাপটে যে কলেজ কর্তৃপক্ষ কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতেন, তা-ও শোনা গেল কলেজ শিক্ষকদের মুখেই। অধিকাংশ শিক্ষকই সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে বলেছেন, ‘নতুন করে সব শুরু হচ্ছে, কাজ করতে দিন।’

    ফ্যামিলি ল বিভাগের অধ্যাপক মৌশ্রী বশিষ্ট বলেন, “আমরা ব্যর্থ। না হলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতই না। বিধিনিষেধ তো আগেও ছিল, কিন্তু তা মানত না কেউই। একটা রমরমা, দাপট ছিল— তা দূর করতে উপাধ্যক্ষ বহুবার চেষ্টাও করেছেন। আজ থেকে কলেজ খুলছে। সুষ্ঠু ভাবে চলুক সেটাই চাইব।”

    কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য এবং অধ্যাপক হরিপদ বণিক জানিয়েছেন, কলেজ যথাসময়ে শুরু হয়েছে। পরিচালন সমিতির নির্দেশ অনুযায়ী, অধ্যক্ষ-সহ বাকিরা কাজ করবেন।

    তবে, নতুন করে তেমন কিছুই জানাননি কলেজের অধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, কলেজ পরিচালন সমিতির নির্দেশ মেনে পড়ুয়াদের সুরক্ষার স্বার্থে যাবতীয় বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। ৮ জুলাই, মঙ্গলবার থেকে এলএলএম-এর ক্লাস শুরু হবে।

    কসবাকাণ্ডের জেরে ২৯ জুন কলেজ পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছিল। দীর্ঘ বৈঠক এবং আলোচনার পর সোমবার ৭ জুলাই কড়া পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপে কলেজ খোলা হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষী বরুণ মাহালির তত্ত্বাবধানে পড়ুয়াদের সচিত্র পরিচয়পত্র দেখে তবেই কলেজ চত্বরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যাঁরা পরিচয় পত্র আনতে ভুলে গিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ কারণ সুনিশ্চিত করেই কলেজে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। বরুণ জানিয়েছেন, কলেজে যা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি রুখতেই পরিচালন সমিতি কিছু নির্দেশ জারি করেছে। সেই মতই নির্দিষ্ট সময়ে কলেজের গেট খোলা বা বন্ধ রাখা হবে। এই নির্দেশ সকলেই মানতে হবে।

    সকাল ৭টা থেকে কলেজ খোলার পর অধ্যক্ষ-সহ শিক্ষক-অধ্যাপকেরা নিয়ম মেনেই কলেজে এসেছেন। তাঁদের জন্য নতুন হাজিরার খাতা রাখা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে পুরোনো খাতাটি এখন ব্যবহার করা যাবে না, এমনটাই জানানো হয়েছে। উপযুক্ত কারণ ছাড়া কোনও শিক্ষার্থীকেই কলেজে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। বহিরাগত বা অন্য কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে বৈধ অনুমতি ছাড়া কলেজে প্রবেশের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

    এক নজরে পঠনপাঠন ও প্রশাসনিক সূচি:

    পাঁচ বছরে বিএ এলএলবি কোর্সের প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপের কাজ ৭ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত করা হবে। পড়ুয়াদের ভর্তি সংক্রান্ত নথির পাশাপাশি, কলেজ আইডি কার্ড সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক।
    চতুর্থ, ষষ্ঠ এবং অষ্টম সেমেস্টারের ইন্টারনাল প্রজেক্ট পেপার জমা দেওয়ার জন্য ৮, ৯ এবং ১০ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে কলেজে প্রবেশ করতে হবে।
    তবে, তদন্তের স্বার্থে কলকাতা পুলিশের তরফে মূল ঘটনাস্থল অর্থাৎ ইউনিয়ন রুম, গার্ডরুম ‘সিল’ করে রাখা হবে। ওই এলাকায় কোনও পড়ুয়া বা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের প্রবেশের অনুমতি নেই। এ ছাড়াও কলেজ পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের হাজিরার খাতা তদন্তকারী কমিটির অনুমোদন ছাড়া ‘ডিসপোজ়ড অফ’ অর্থাৎ বাতিল বা নষ্ট করা যাবে না।

    উল্লেখ্য, ২৫ জুন কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ক্যাম্পাসের রক্ষীর ঘরে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ওই কলেজেরই দুই ছাত্র এবং এক প্রাক্তনীকে। ওই প্রাক্তনী আবার কলেজের অস্থায়ী কর্মী হিসাবেও নিযুক্ত। যদিও মূল অভিযুক্তকে কলেজের চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তা খারিজ করার পরেই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। বয়ানে অসঙ্গতি থাকায় কলেজের নিরাপত্তারক্ষীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)