শান্তনু 'ডাক্তার'ই থাকছেন, রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সিদ্ধান্ত খারিজ হাইকোর্টে
আজ তক | ০৭ জুলাই ২০২৫
রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ এবং সাসপেন্ডেড তৃণমূল নেতা ডাঃ শান্তনু সেনের মেডিক্যাল রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সিদ্ধান্ত খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি অমৃতা সিংহের সিঙ্গেল বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল রেজিস্ট্রেশন বাতিলের আগে শান্তনুকে কোনও কারণ জানায়নি। এক্ষেত্রে নিয়মমাফিক, আগে তাঁর বক্তব্য শোনা উচিত ছিল বলে জানিয়েছে আদালত।
গত ৪ জুলাই রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের তরফে শান্তনুর ডাক্তারি রেজিস্ট্রেশন দুই বছরের জন্য বাতিল করা হয়। অভিযোগ, ‘এফআরসিপি গ্লাসগো’ নামের একটি ডিগ্রি তিনি ব্যবহার করতেন। এটি বিদেশি ডিগ্রি। দাবি করা হয়, এই ডিগ্রিটি তাঁর নামের পাশে ব্যবহার করার অনুমতি ছিল না। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত মাসেই তাঁকে নোটিস ধরায় কাউন্সিল।
শুধু নোটিস ধরিয়েই থেমে থাকেনি কাউন্সিল। তলবও করা হয় শান্তনুকে। কিন্তু কোনও রকম শুনানি না করেই তাঁর রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই সিদ্ধান্তকে 'নন স্পিকিং ক্রিপটিক অর্ডার' বলে উল্লেখ করেছে হাই কোর্ট। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, তদন্ত এবং যাবতীয় নথি শান্তনুকে দিতে হবে কাউন্সিলকে। এরপর তাঁর বক্তব্য শুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
রেজিস্ট্রেশন বাতিল হলে নামের আগে ‘ডাক্তার’ পরিচয় ব্যবহার করতে পারতেন না শান্তনু। লিখতে পারতেন না প্রেসক্রিপশনও। ফলে কার্যত চিকিৎসক হিসেবে তাঁর পরিচিতি এবং পেশা দু'টিই প্রশ্নের মুখে পড়ত। এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। জানান, ষড়যন্ত্র করে কেউ রেজিস্ট্রেশন কেড়ে নিতে চাইলে তিনি চুপ করে থাকবেন না।
কাউন্সিলের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, ‘এফআরসিপি’ একটি সম্মানসূচক ডিগ্রি। এই ডিগ্রি ব্যবহার করে চিকিৎসা করা যায় কি না, তা জানতে গ্লাসগোতে মেল করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তর মেলেনি। সেই অবস্থাতেই দ্রুত রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে কাউন্সিল।
প্রসঙ্গত, শান্তনু সেন দীর্ঘদিন রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে সরকারের প্রতিনিধি ছিলেন। তবে চলতি বছর সেই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। একই সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসও তাঁকে সাসপেন্ড করে। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণে দল ও সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় শান্তনুর।
আরজি করের ঘটনার পর ‘মেয়েদের রাত দখল’ কর্মসূচিতে শান্তনু ও তাঁর স্ত্রীর অংশগ্রহণ, হাসপাতালে দুর্নীতি নিয়ে সরব হওয়া, সবকিছুতেই তিনি সংবাদের শিরোনামে উঠে আসেন। এমতাবস্থায় তৃণমূলের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। শেষে দলবিরোধী কাজের অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়।
সোমবার হাই কোর্টের রায়ে কিছুটা স্বস্তি পেলেন শান্তনু। তবে তদন্ত ও শুনানি-প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি চূড়ান্ত নয় বলেই মত আইনি মহলের। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল এরপর কী সিদ্ধান্ত নেয় এখন সেটাই দেখার।