বিজেপি নেতা জগন্নাথের আয় বহিৰ্ভূত সম্পত্তি ও লেনদেন খতিয়ে দেখতে নবান্নকে নির্দেশ দিল রাষ্ট্রপতি ভবন
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৭ জুলাই ২০২৫
বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বিতর্ক বেড়েই চলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে আয় বহির্ভূত সম্পত্তি ও বেনামে লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। এবার সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চাইছে রাষ্ট্রপতি ভবন। সেই মর্মে নবান্নকে চিঠি দিয়েছে রাইসিনা হিলস-এর সচিবালয়। এই বিষয় নিয়ে রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বিরোধী দলনেতা বলেছিলেন, বিষয়টি তিনি এখনও জানেন না। যদিও, নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জগন্নাথ। বিজেপি নেতার ঘনিষ্ঠ মহলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, চিঠির কোনও অস্তিত্ব নেই। নবান্নের পক্ষ থেকেও এই ধরনের চিঠির আনুষ্ঠানিক প্রাপ্তি স্বীকার করা হয়নি।
জানা যাচ্ছে, জগন্নাথের বিরুদ্ধে আয় বহির্ভূত সম্পত্তি এবং বেনামে লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে দলের আর্থিক তছরুপেরও অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি উদয় সিং নামে এক জনৈক ব্যক্তি ইডি-সিবিআই-এর দপ্তরে জগন্নাথের সম্পত্তি নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে চাইছে রাষ্ট্রপতি ভবন। এজন্য রাইসিনা হিল গোটা বিষয়টি তদন্তের জন্য নবান্নকে নির্দেশ দিয়েছে। সেই তদন্তে যা উঠে আসবে, তার সম্পূর্ণ তথ্য অভিযোগকারীকেও জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
কয়েকদিন আগেই দলের রাজ্য় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া নেতা শমীক ভট্টাচার্য। সায়েন্স সিটিতে ধুমধাম করে তাঁর অভিনন্দন-সমারোহ করা হয়েছে। শমীকের অভিষেকের দু’দিন যেতে না যেতেই দলের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে উঠল দুর্নীতির অভিযোগ।
এ দিকে, এই ঘটনার বিষয়ে জগন্নাথ জানান, ‘এটা মিথ্যা অভিযোগ। আমার কোনও বেআইনি সম্পত্তি নেই। আয় বহির্ভূত কিছুই নয়। বিরোধীরা এই সব করে থামাতে পারবেন না।’
যদিও বিজেপির দাবি, রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফে এই ধরনের ইমেল যায় না। কোনও বিষয়ে জানার হলে, রাষ্ট্রপতির সচিবালয় অন্য ইমেল আইডি থেকে নোটিস পাঠায়। বিজেপি নেতৃত্বেরও দাবি, ‘গোটা ইমেলটি ভুয়ো। তার জন্য দলগত ভাবে যা অবস্থান যা নেওয়ার তা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, জগন্নাথ সিউড়ির আদি বাসিন্দা। পাশাপাশি কলকাতাতেও তাঁদের বাসস্থান রয়েছে। সাংবাদিকতার প্রথম জীবনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের মুখপত্রে লেখালিখি করতেন। বাজপেয়ী জমানায় সেখান থেকে একটি বহুল প্রচারিত প্রথম শ্রেণীর দৈনিক সংবাদপত্রে সাংবাদিকতার সুযোগ পান। প্রায় এক দশক পর সেখান থেকে অন্য একটি সর্বাধিক প্রচারিত প্রথম শ্রেণীর দৈনিক সংবাদপত্রে সাংবাদিকতা শুরু করেন। এদিকে ২০১১ সাল থেকেই জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভায় বিজেপির টিকিটে ভোটে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রাহুল সিনহার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গ বিজেপি জগন্নাথকে পাত্তা দেয়নি। এরপর পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কেন্দ্রের মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের জনসমর্থনের নিরিখে সিপিএমকে হঠিয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠেছে বিজেপি। এই সময় থেকে রাজ্যের শাসকদল থেকে অনেক নেতা মন্ত্রী বিজেপিতে ভিড়েছেন। আবার অনেকে পুনরায় তৃণমূলে ফিরে গেছেন। সেই মুহূর্তে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সংবাদ পত্রের চাকরি ছেড়ে সিউড়ির প্রার্থী হয়ে গেলেন সাংবাদিক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তৎকালীন বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রতের গড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে যান। তিনি দলের কোনও পোড়খাওয়া নেতা নন। বিধানসভা নির্বাচনে নিজের এলাকায় জনসমর্থন প্রমাণেও সফল হননি। বিধানসভা ভোটে ব্যর্থ হয়েও কোনও এক অদৃশ্য জাদুবলে তিনি রাতারাতি বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক হয়ে যান। সেই সময়েই দলের রাজ্য স্তরে নেতাদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়। বিজেপিতে তাঁর এই উল্কার গতিতে উত্থান নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক বাড়তে থাকে। এবার তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তি বেড়েছে দলে।