উত্তম ‘অনুপ্রবেশকারী’! বিশ্বাস হচ্ছে না সাদিয়ালকুঠি গ্রামের বাসিন্দাদের, পাশে উদয়ন, রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান হরিহর
বর্তমান | ০৮ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, দেওয়ানহাট: চোখের সামনে জন্ম। কোলেপিঠে করে বড় করেছেন। সেই ছেলে ‘অনুপ্রবেশকারী’! উত্তমকুমার ব্রজবাসী অসম সরকারের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের এমন নোটিস পাওয়ার পর থেকেই তাজ্জব দিনহাটা ২ নং ব্লকের চৌধুরীহাটের সাদিয়ালকুঠি গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের সাফ কথা, তিন পুরুষ ধরে গ্রামে থাকা একটি পরিবারের ছেলেকে কোন আক্কেলে এমন নোটিস পাঠিয়ে অসম সরকার বিড়ম্বনায় ফেলল, তা বোধগম্য হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন উত্তমকুমারের গ্রামের বাসিন্দারা। আক্কেল গুড়ুম করা ঘটনার কথা জানতে পেরে উত্তমকে ডেকে কথা বলেছেন এলাকার বিধায়ক তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। সবরকম সাহায্য করার বার্তা দিয়েছেন তিনি। উত্তমকুমার বলেন, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী নয়ারহাটে একটি কর্মসূচিতে এসেছিলেন। সেখানে তিনি আমাকে ডেকে সবকিছু শুনেছেন। পাশে থেকে সাহায্যের কথা বলেছেন তিনি।
রাজবংশী সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে এমন সমন পাঠানোর খবর পেয়ে সোমবার উত্তমকুমারের বাড়িতে গিয়ে দেখা করে বিস্তারিত জেনে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির চেয়াম্যান হরিহর দাসও। তাঁর কথায়, একজন রাজবংশী মানুষকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে নোটিস পাঠানোর খবর পেয়ে দেখা করেছি পরিবারটির সঙ্গে। খুবই আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরা। পাশে থেকে সবরকম সাহায্য করব।
১৯৬৬ থেকে ’৭১ সালের মধ্যে অসম সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে উপযুক্ত প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার নোটিস দেওয়া হয়েছে দিনহাটার দিনমজুর উত্তমকুমারকে। তাতেই ভিটেমাটি হারিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে যাওয়ার আতঙ্কে কার্যত নাওয়া খাওয়া বন্ধ করেছেন তিনি ও পরিবার।
গ্রামের বাসিন্দা শোভা ব্রজবাসীর কথায়, আমার বিয়ে হয়ে গ্রামে আসার কয়েক মাস পর উত্তমের জন্ম হয়। ছোট থেকে ওকে কোলে পিঠে করে বড় করেছি। সেই ছেলে কীভাবে অনুপ্রবেশকারী হয়। নোটিস দিলেই হল নাকি? যুক্তি তো থাকতে হবে। তখন তো ওর জন্মই হয়নি।
গ্রামের আর এক প্রবীণ বাসিন্দা মালতি ব্রজবাসী বলেন, তিন পুরুষ ধরে উত্তমরা এই গ্রামে বসবাস করছেন। একসময় তাঁদের বাড়িতেই আমরা থাকতাম। ওর জন্ম এই গ্রামেই। উত্তমের সঙ্গে হরিহর দাস। -নিজস্ব চিত্র।