পড়ুয়ার দেখা নেই, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধন করা চাপড়া গভর্নমেন্ট কলেজ ধুঁকছে
বর্তমান | ০৮ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, চাপড়া: মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধন করা চাপড়া গভর্নমেন্ট কলেজ ধুঁকছে পড়ুয়ার অভাবে। পর্যাপ্ত শিক্ষক ও পরিকাঠামো থাকলেও, পড়ুয়া কার্যত নেই বললেই চলে। প্রতিবছর ভর্তির হারও উদ্বেগজনকভাবে কমছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিজ্ঞান বিভাগের। সেই বিভাগের প্রতিটি বিষয়ে একাধিক প্রফেসর থাকলেও, পড়ুয়ার সংখ্যা হাতে গোনা। আট জন প্রফেসার পড়াচ্ছেন আট পড়ুয়াকে। তাদের মধ্যেও অনেক আবার নিয়মিত কলেজ আসেন না। যা চিন্তার কারণ শিক্ষকদেরও।
কলেজের অধ্যক্ষ শুভাশিস পান্ডা বলেন, পড়ুয়ার সংখ্যা প্রতিবছর কমছে। অনেকে ভর্তি হয়েও কলেজে আসছেন না। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা ২৫৬ জন। তবে নিয়মিত কলেজ আসেন ৬০-৭০ জন পড়ুয়ার। কলেজে লাইব্রেরিয়ান সহ স্থায়ী প্রফেসর ২১ জন। মোট আটটি বিষয় সেখানে পড়ানো হয়। যার মধ্যে রয়েছে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, অঙ্ক, বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, সমাজবিদ্যা। বিগত তিন বছর ধরে সেই কলেজের পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে। ২০২২ সালে ১০৪ জন, ২০২৩ সালে ৯৮ জন এবং ২০২৪ সালে ৭৭ জন ভর্তি হয়েছিলেন। ২০২৫ সালে কতজন নতুন পড়ুয়া ভর্তি হবে সেই দিকেই তাকিয়ে প্রফেসররা।
বিজ্ঞান বিভাগের অবস্থা আরও শোচনীয়। সেখানে পদার্থবিদ্যা ও অঙ্কের তিনজন করে প্রফেসার ও রসায়নের ২ জনের প্রফেসর— অর্থাৎ শুধু বিজ্ঞান বিভাগেই ৮ জন স্থায়ী প্রফেসার রয়েছেন। সেখানে তিনটি বর্ষ মিলিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের মোট পড়ুয়া ৮ জন। প্রথম বর্ষে একজন পড়ুয়া রয়েছে। দ্বিতীয় বর্ষে ৩ জন, এবং তৃতীয় বর্ষের ৪ জন পড়ুয়া রয়েছে। অথচ সেই কলেজে ল্যাব ও তার সরঞ্জাম কিছুরই ঘাটতি নেই। সম্প্রতি এই চাপড়ার গভর্নমেন্ট কলেজ, অন্যান্য কলেজের সঙ্গে যৌথভাবে রিসার্চও করছে। তাতে ন্যানো টেকনোলজিকে কীভাবে আরও ভালোভাবে সোলাল সেলে ব্যবহার করা যায় সেই নিয়েও তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এনিয়ে কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর সুপ্রিয় মণ্ডল বলেন, ২০২৩ সাল থেকে এই রিসার্চের কাজ করা হচ্ছে। ২০২৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এই কাজ হবে। স্টুডেন্ট এত কম থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়ালি এই কলেজের উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু কলেজ পঠনপাঠন শুরু হয় ২০১৪ সালের শেষের দিকে। অর্থাৎ কলেজের বয়স প্রায় ১৩ বছর। চাপড়া ব্লকের হাটখোলা পঞ্চায়েতের শিকরা এলাকায় এই কলেজটি রয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামের একদম শেষ প্রান্তে কলেজটি অবস্থিত। যোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। চাপড়া বাজার থেকে শিকরা যাওয়ার মূল রাস্তা থেকে প্রায় দু’ কিলোমিটার গ্রামের ভিতরে ঢুকলে তবেই পৌঁছনো যায়। তাই অবস্থান ঠিক না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা এই কলেজে ভর্তি হতে চাইছেন না বলেই মনে করছে শিক্ষক মহল।
বিগত কয়েক বছরে কলেজকে নানাভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। গাছপালা দিয়ে ঘেরা মনোরম এই কলেজ ক্যাম্পাসে রয়েছে একটি সুন্দরভাবে গড়ে তোলা বাগান। কলেজ চত্বরের আশেপাশের এলাকাতেও বিভিন্ন ধরনের বিরল প্রজাতির গাছ, ঔষধি গাছ এবং অজানা পশুপাখি নজরে পড়ে। কয়েক বছর আগে কলেজ কর্তৃপক্ষ আশেপাশের বেশ কিছু জায়গায় রাস্তার ধারে মোট ১০টি জৈববৈচিত্র্য হটস্পট চিহ্নিত করে। কলেজের এই উদ্যোগ রাজ্য বায়োডাইভার্সিটি বোর্ডের প্রশংসা কুড়িয়েছিল।