রাজুয়ায় বিস্ফোরণের পর থেকে স্কুলে যাচ্ছে না অনেক পড়ুয়া, বোঝাতে এলেন পরিদর্শক
বর্তমান | ০৮ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া: কাটোয়ার রাজুয়া গ্রামের বিস্ফোরণের ঘটনায় আতঙ্কগ্রস্ত ছোট ছোট পড়ুয়ারাও। যে পরিত্যক্ত বাড়িটিতে বিস্ফোরণ হয়, সেটি থেকে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের দূরত্ব মেরেকেটে পঞ্চাশ মিটার। দুর্ঘটনাগ্রস্থ বাড়িতে রক্তের দাগ, কাটা হাতের অংশ দেখে তারা ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছে। ঘ্টনার তিনদিন বাদেও অনেকেই স্কুলমুখো হচ্ছে না। সোমবার তাদের আতঙ্ক কাটাতে কথা বললেন স্কুল পরিদর্শক। তাদের তিনি বোঝালেন।
কাটোয়া পশ্চিম চক্রের পরিদর্শক ফ্যান্সি মুখোপাধ্যায় বলেন, স্কুলের পাশেই বিস্ফোরণ হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই ছোট পড়ুয়াদের মনে তার প্রভাব তো পড়বেই। তারা অনেকেই এখনও ভয়ে স্কুল আসছে না বলে শুনলাম। তাই স্কুলে এসে শিশুদের বোঝালাম। প্রধান শিক্ষিকাকে বলেছি কোনও শিশু এরজন্য আরও ভয় পেলে প্রয়োজনে মনোবিদ দিয়ে কাউন্সেলিং করানো হবে।
প্রসঙ্গত, ৪ জুলাই রাতে রাজুয়া গ্রামের বাসিন্দা তুফান শেখ বীরভূমের নানুর কয়েকজন বোমা বাঁধার জন্য দুষ্কৃতী নিয়ে এসেছিল। মৃত মিন্টু শেখের পরিত্যক্ত বাড়িতেই বসে বোমা বাঁধা হচ্ছিল। সেখানেই ঘটে যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ। ঘটনায় মৃত্যু হয় নানুরের যুবক বরকত কারিকরের। আর জখম হয় তুফান শেখ।
রাজুয়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। মোট ২৯০ জন পড়ুয়া রয়েছে স্কুলটিতে। আর শিক্ষক রয়েছেন পাঁচজন। ঘটনার পরের দিন থেকেই গ্রামের আস্তানা পাড়ার অনেক পড়ুয়াই স্কুলমুখী হচ্ছে না। তারা ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছে। অভিভাবকদের একাংশও ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। পূর্ণিমা খাতুনের ছেলে ইব্রাহিম শেখ ওই স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তিনি বলেন, কী করে ছেলেকে স্কুলে পাঠাব। ছোট ছেলে স্কুলে গেলেই এখানে সেখানে ঘুরবে। আরও যে কোথাও বোমা মজুত করে রাখা নেই, তার গ্যারান্টি কে দেবে। তাই ছেলেকে আমি ঘরবন্দি করে রেখেছি। আরেক বাসিন্দা রেজিলা বিবি বলেন, গ্রামে গত বছর এক প্রাক্তন নৌসেনাকে হেরোইন সহ পুলিস ধরল। তখন গ্রামে পুলিস, সংবাদমাধ্যমের আনাগোনা বেড়েছিল। আবার বোমা বিস্ফোরণ ঘটল। বার বার এমন ঘটনায় শিশুমনে প্রভাব তো পড়বেই। নাজমা খাতুন নামে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী এদিন বলে, বোমা যেদিন রাতে ফাটল, পরের দিন সকালে ওই বাড়িটিতে গিয়ে দেখছি রক্তের দাগ রয়েছে। আগুনে ঝলসানো জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এসব দেখে রাতে ঘুম আসছে না। ভয় লাগছে। তাই স্কুলে যাচ্ছি না। জিন্নাত শেখ নামে চতুর্থ শ্রেণির এক পড়ুয়া বলে, আমার বাড়ি থেকে বলেছে এখন কয়েকদিন স্কুলে যেতে হবে না। কারণ স্কুল গেলেই ওই বাড়িটার পাশ দিয়েই যেতে হবে। যদি আবার বোমা ফেটে যায়। রাজুয়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শিপ্রা পাল বলেন, স্কুলে কয়েকদিন ধরেই বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী আসছে না। তাদের অভিভাবকরা স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। আমরা বোঝাচ্ছি শিশুদের। গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, শিশু মনে প্রভাব পড়ছে। ওরা এখন ছোট। এখন থেকে ওরা কী শিখবে। ছোট থেকেই যদি ওরা বোমা বারুদের বিস্ফোরণ দেখে, তাহলে বড় হয়ে ওদের মনে খারাপ প্রভাব পড়বে। আমরা চাই পুলিস নজরদারি বাড়াক।