শান্তিপুরের আত্মঘাতী মহিলার বাড়িতে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা
বর্তমান | ০৮ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ফুল তোলার অপরাধে মহিলাকে চোর অপবাদ দিয়ে কান ধরে ওঠবোস করানো এবং অপমানে তাঁর আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যেই বিস্তর জলঘোলা হয়েছে শান্তিপুরে। সোমবার আবার মৃতার বাড়িতে যান বিজেপি নেত্রী তথা জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ঘটা এই ঘটনায় বিজেপি অহেতুক রাজনীতি খোঁজার চেষ্টা করছে বলে অভিমত আমজনতার একাংশের। একই দাবি নিয়ে গেরুয়া শিবিরকে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূলও।
শান্তিপুর থানার হরিপুর মধ্য কলোনি এলাকায় ঘটেছিল ঘটনাটি। প্রতিবেশী অসীম করাতির বাড়ি থেকে ফুল তুলেছিলেন সরস্বতী দে (৫০)। সেই সময়ে তাঁকে আচমকাই চোর চোর বলে ধাওয়া করে তারা। শুধু তাই নয়, ওই মহিলাকে আটকে রেখে কান ধরে ওঠবোস করায় অভিযুক্ত পরিবার। সেই অপমানেই পরে আত্মঘাতী হন সরস্বতীদেবী। আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে কাঠগড়ায় ওঠে সস্ত্রীক অসীম করাতি ও তার ভাই মিলন করাতি। মিলন শান্তিপুর থানার সিভিক ভলান্টিয়ার। মৃতার ছোট মেয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শান্তিপুর থানায়। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত নেমে ইতিমধ্যেই অসীমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। মিলনকে আপাতত কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় সোমবার মৃতার বাড়িতে যান বিজেপি নেত্রী তথা জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার। তিনি সিভিক ভলান্টিয়ারকে আক্রমণ করে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ার একটা আতঙ্কের কারণ। গোটা পাড়ার লোক বলছে তাদের ভয়ে গোটা পাড়া তটস্থ হয়ে থাকত। পুলিস নিজে এসে দেহ উদ্ধার করেনি। দুজন ডোমকে দিয়ে দেহ উদ্ধার করানো হয়েছে। পরিবারের আশঙ্কা আত্মহত্যা নয়, অন্য কিছু ঘটে থাকতে পারে। আমরা কমিশনের তরফ থেকে পুলিসের কাছে রিপোর্ট চাইব। গোটা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে অরাজকতা শুরু হয়েছে। পাল্টা তৃণমূল অবশ্য বিজেপিকে অহেতুক রাজনীতি করার থেকে বিরত থাকার ‹উপদেশ› দিয়েছে। শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী বলেন, ঘটনাটি অবশ্যই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমার মনে হয় না কোনও রাজনৈতিক দলই একজন মানুষের আত্মঘাতী হওয়ার বিষয়টিকে সমর্থন করে। এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিস উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে একজন। সিভিককেও বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ঘটা এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনও যোগ নেই। তা সত্ত্বেও বিজেপি যেভাবে রাজনীতি খোঁজার চেষ্টা করছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বাংলার মানুষ হিসেবে আমি এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমরা এমন এক বিরোধীদল পেয়েছি, যারা প্রকৃত বিরোধিতা ছেড়ে অহেতুক রাজনীতি খোঁজার চেষ্টা করছে। মানুষ তাই এদের ভোট দেয় না।
এদিকে, রাজনীতি খোঁজার অহেতুক চেষ্টা যে বিজেপি করছে সেই সুর শোনা গিয়েছে আমজনতার মুখেও। বকলমে রাজনীতি সচেতন মানুষের কাছে সমালোচিত হয়েছে বিজেপি। এদিকে, অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে আর কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে রানাঘাটের এসডিপিও সবিতা গটিয়ালের সঙ্গে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি। জবাব দেননি মেসেজেরও।