নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: বাল্যবিবাহ রুখতে এবার অত্যন্ত কড়া মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। গত একমাসেই ২০২নাবালিকার বিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরে বাল্যবিবাহের ঘটনায় ৩৮টি মামলা রুজু করে ৯৫জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বাল্যবিবাহ রুখতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নেওয়া হয়েছে। এজন্য জুন মাসে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। বছরের প্রথম পাঁচমাসে যত নাবালিকা বিয়ে আটকানো হয়েছে, তার চেয়ে বেশি একমাসের বিশেষ অভিযানেই আটকানো হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩সালে জেলায় ১৩০টি বাল্যবিবাহ আটকানো হয়। ২০২৪সালে সেই সংখ্যা বেড়ে ৪৭১ হয়েছিল। ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত ১৬৩টি বাল্যবিবাহ আটকানো হয়। কিন্তু এবছর প্রথম পাঁচমাসের চেয়েও বেশি বিয়ে শুধু জুন মাসে আটকানো গিয়েছে।
এই বিশেষ অভিযানের জন্য জেলা প্রশাসন ও সমস্ত লাইন ডিপার্টমেন্ট কোমর বেঁধে নেমেছিল। মাদ্রাসা শিক্ষাদপ্তর, নানা বিদ্যালয়, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে জেলার ২৬টি ব্লকে লাগাতার নজরদারি ও অভিযান চালানো হয়। এই জেলায় সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ বহরমপুর ব্লক ও হরিহরপাড়া ব্লকে হচ্ছিল। তাই এই দু’টি ব্লকে পাইলট প্রোজেক্ট করে অভিযান চলে। জেলার ২০২টির মধ্যে শুধুমাত্র বহরমপুর ব্লকেই ৪৬টি বাল্যবিবাহ আটকানো হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক(উন্নয়ন) চিরন্তন প্রামাণিক বলেন, ৪জুন থেকে বহরমপুর ও হরিহরপাড়া ব্লককে পাইলট করে কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এবছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই দু’টি ব্লককে স্কুলছুট ও বাল্যবিবাহ মুক্ত করা হবে। বাকি ২৪টি ব্লকেও একইভাবে আমাদের লড়াই চলছে। গত একমাসে বাল্যবিবাহ আটকাতে ১০৯৮নম্বরে প্রচুর ফোন এসেছে। বলা ভালো, তিনবছরে আমরা যত ফোন পেয়েছি, তত ফোন গত একমাসেই এসেছে। ২০২৫সালে এই বিশেষ উদ্যোগের আগে অবধি ১৬৩টি বাল্যবিবাহ আটকানো হয়েছিল। এই বিশেষ অভিযানে শুধুমাত্র জুন মাসে সেই সংখ্যা হয়েছে ২০২টি। বাল্যবিবাহ আটকানোর পাশাপাশি আমরা লাগাতার এফআইআর করছি। পুলিস আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তার করছে।
জেলা প্রশাসনের কাজে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে পুলিস। ২০২৪সালে বাল্যবিবাহ আটকানো-সংক্রান্ত যত মামলা হয়েছিল, তার প্রায় দ্বিগুণ মামলা গত ছ’মাসে হয়েছে। এবছর মে মাস পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ পুলিস জেলায় ২৯টি মামলা হয়। সেখানে এক মাসেই শুধু ৩৭টি মামলা হয়েছে। হরিহরপাড়া থানায় সবচেয়ে বেশি আটটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। তারপর বহরমপুর থানায় চারটি এফআইআর হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সমস্ত লাইন ডিপার্টমেন্ট, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, স্কুল, মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তর সহ সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে বৈঠক করছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক নিজেই বাল্যবিবাহ রোধের কাজ সরেজমিনে খতিয়ে দেখছেন। সোমবার বহরমপুর জেলা প্রশাসনিক ভবনে গত একমাসের পারফরম্যান্স নিয়ে একটি রিভিউ বৈঠক হয়। সেখানে যুবকল্যাণ, বিপর্যয় মোকাবিলা, সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষাদপ্তরের কাজ নিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক উষ্মা প্রকাশ করেন। সমস্ত বিভাগকে নিজেদের কাজ সামলানোর পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন।