• চিহ্নিত অযোগ্যদের বাদ রেখেই ফের বিজ্ঞপ্তি, রাজ্যকে নির্দেশ হাইকোর্টের
    বর্তমান | ০৮ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ‘চিহ্নিত অযোগ্য’দের বাদ দিয়ে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। আর সেই মর্মে জারি করতে হবে বিজ্ঞপ্তি। এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সোমবার এই নির্দেশই দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ২০১৬ সালে স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্টের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল শিক্ষাদপ্তর। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরপরই মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। অভিযোগ ওঠে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওই নয়া বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী। বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে একের পর এক মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। মামলাকারীদের দাবি ছিল, প্রায় ৪৪ হাজার শূন্যপদের যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে, তা আইনসম্মত নয়। কারণ শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০১৬ সালের সিলেকশন বা বাছাই প্রক্রিয়া ওই সালের ‘রুল’ অনুযায়ী করতে হবে। এবং ২০১৬ সালের চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে থেকেই তা করার নির্দেশ রয়েছে। এক্ষেত্রে ২০১৬ সালের নিয়োগবিধি মানা হয়নি। পাশাপাশি বয়সের ছাড়ের বিষয়টিও নির্দেশ মেনে করা হয়নি বলে দাবি করেন মামলাকারীদের আইনজীবীরা।

    বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যর সিঙ্গল বেঞ্চে মামলার শুনানিতে এসএসসির তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট নির্দিষ্টভাবে কোথাও বলেনি যে, চিহ্নিত অযোগ্যরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতা বাবদ যে দশ নম্বর দেওয়ার কথা এসএসসির নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সেই নম্বর এই অযোগ্যদের দেওয়া যাবে না বলেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কোথাও উল্লেখ নেই বলে দাবি করে এসএসসি এবং রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, এসএসসি এবং রাজ্যের পক্ষ থেকে আরও যুক্তি দেওয়া হয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা চাকরি হারিয়েছেন। তাঁদের বেতনও ফেরত দিতে হয়েছে। এখানেই বিষয়টি সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে। ফলে চাকরির পরীক্ষায় বসতে না দিলে একই অপরাধে তাঁদের দু’বার শাস্তি দেওয়া হবে। 

    কিন্তু এসএসসি এবং রাজ্যের এই যুক্তিতে মান্যতা দেননি বিচারপতি ভট্টাচার্য। শুনানি চলাকালীন পর্যবেক্ষণে বিচারপতি জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া যদি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী হয়, সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করতেই পারে। এরপর এদিন শুনানি শেষে সবপক্ষের সওয়াল-জবাব পর্যালোচনা করে বিচারপতি ভট্টাচার্য নির্দেশে জানান, চিহ্নিত অযোগ্যরা পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। তাঁদের বাদ রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়াও ইতিমধ্যে যদি চিহ্নিত অযোগ্যদের মধ্যে কেউ পরীক্ষায় বসার জন্য আবেদন করে থাকেন, তাঁদের বাদ দিতে হবে। পাশাপাশি বিচারপতি নির্দেশে আরও জানান, গত ৩০ মে এসএসসি যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল, তা বদল করে নয়া বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। এর পাশাপাশি আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই এসএসসিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে রাজ্যকে। এই ইস্যুতে এসএসসির বক্তব্য, ওবিসি’র মতো এক্ষেত্রেও সংশোধনী দেওয়া হতে পারে। তবে যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের বাছাইয়ের প্রযুক্তি এই মুহূর্তে নেই। 

    হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর চিন্ময় মণ্ডল নামে যোগ্য চাকরি প্রার্থী বলেন, ‘অযোগ্যদের পরীক্ষায় বসতে না দেওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। সরকার ও এসএসসি কীভাবে অযোগ্যদের জন্য লড়ে যাচ্ছে, সেটা দেখে আমরা হতবাক।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)