প্রীতেশ বসু, কলকাতা: জমি-বাড়ির রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া সহজ করতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য। এখন অনলাইনেই রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা যায়। রেজিস্ট্রেশন ফি এবং স্ট্যাম্প ডিউটি অনলাইনে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই ধারাবাহিকতায় এবার জমি-বাড়ির রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ ‘ক্যাশলেস’ করে দেওয়ার পথে হাঁটল নবান্ন। অর্থাৎ, রেজিস্ট্রেশন বাবদ ইউজার চার্জ থেকে শুরু করে অন্যান্য সব ফি জমা দেওয়ার সময় নগদ লেনদেনের প্রয়োজনই পড়বে না। সারা রাজ্যে এই সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক রেজিস্ট্রি অফিসে বসছে ‘পয়েন্ট অব সেল টার্মিনাল’। এখানে ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ইউপিআই, কিউআর কোড স্ক্যান সহ যে কোনও ধরনের ‘ক্যাশলেস’ লেনদেনের সুবিধা মিলবে।
এই পরিষেবা চালু করতে জুন মাসের শেষে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য সরকারের অর্থদপ্তরের আওতাধীন ‘ডিরেক্টরেট অব রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড স্ট্যাম্প ডিউটি’। বিজ্ঞপ্তিতে বলে দেওয়া হয়েছে, জুলাই মাস থেকে এই পরিষেবা সাধারণ মানুষের জন্য চালু করে দিতে হবে। রাজ্যের প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, এখন এমন মানুষ খুব কমই আছেন, যাঁরা ক্যাশলেস বা অনলাইন পেমেন্টে অভ্যস্ত নন। প্রতিটি রেজিস্ট্রি অফিসে এই ব্যবস্থাপনা চালু হয়ে গেলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন। সেই সঙ্গে গোটা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও এই পদক্ষেপ যথেষ্ট ইতিবাচক হয়ে উঠবে বলে আশাবাদী নবান্নের কর্তারা।
এক আধিকারিকের কথায়, ‘জমি-বাড়ি রেজিস্ট্রেশনের জন্য এত দিন ইউজার চার্জ জমা দিতে হতো নগদে। এই নিয়ম তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছিল অনেক দিন ধরেই। নানা কারণে ক্যাশলেস পরিষেবা চালু করা যাচ্ছিল না। শেষমেশ সব সমস্যা মিটিয়েই নতুন ব্যবস্থা চালু করার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য। সেই মতো জেলায় জেলায় কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।’ তিনি আরও জানান, স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি কত হবে, তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট জমি বা বাড়ির বর্তমান বাজারদরের উপর। অনেক ক্ষেত্রে ওই টাকা জমা পড়ার পর দলিল যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি আরও বেশি টাকা হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ধরা যাক, দলিলে একটি জমির সামনের রাস্তা আট ফুট চওড়া বলে লেখা হয়েছিল। দলিল যাচাইয়ের পর দেখা গেল, রাস্তাটি আসলে ১২ ফুট চওড়া। সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি ও স্ট্যাম্প ডিউটি বেড়ে যায়। বাকি টাকা জমা দিলে তবেই সম্পূর্ণ হয় রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া। নয়া ব্যবস্থাপনায় এই অতিরিক্ত টাকাও জমা দেওয়া যাবে অনলাইনে।’ প্রসঙ্গত, রাজ্যের এই ধরনের একাধিক পদক্ষেপের কারণে কোভিডের সময় থেকে স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি’র উপর ছাড় তুলে দেওয়া সত্ত্বেও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে রাজ্যের। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের তুলনায় চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসেও বেড়েছে রাজস্ব।