শিক্ষকের ঘাটতি মেটাতে ‘থ্রি টিচার পলিসি’ জেলায়, ৩৫০ প্রাথমিক স্কুলের অতিরিক্ত শিক্ষককে অন্যত্র বদলির সিদ্ধান্ত
বর্তমান | ০৯ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: দীর্ঘ বছর ধরে একই স্কুলে পড়িয়ে শিকড় গজিয়েছে প্রাথমিকের শিক্ষকদের। ছাত্র সংখ্যা কম থাকায় পড়াশোনার বালাই নেই। সময়মতো স্কুলে আসা যাওয়াই কাজ। কোথাও কোথাও শিক্ষক রয়েছে পাঁচ থেকে ছ’জন। অথচ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা হাতেগোনা। শহর ও শহর সংলগ্ন প্রাথমিক স্কুলগুলোতে এই ছবি দেখা যায়।
শহরের বাইরে গ্রামীণ এলাকার প্রাথমিক স্কুলগুলোতে অন্য ছবি। সেগুলো ধুঁকছে শিক্ষকের অভাবে। কোথাও একজন, কোথাও আবার দুজন শিক্ষক। তাই দিয়েই কোনওরকমে চলছে পঠন পাঠন। কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া, তেহট্ট-১, তেহট্ট-২, করিমপুর সার্কেলের প্রাথমিক স্কুলগুলোতে এই সমস্যা দেখা যায়। এবার সেই শিক্ষকের অপ্রতুলতার সমস্যায় জর্জরিত স্কুলগুলোর হাল ফেরাতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। তার জন্য গ্রহণ করা হচ্ছে ‘থ্রি টিচার পলিসি’। অর্থাৎ প্রাথমিক স্কুলগুলোতে যাতে অন্ততপক্ষে তিনজন করে শিক্ষক রাখা যায় সেই দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে। তার জন্য শহুরে এলাকার প্রাথমিক স্কুলে যেখানে অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছে, তাদের বদলি করা হবে গ্রামীণ এলাকায়।
নদীয়া জেলার ডিপিএসসি বোর্ডের চেয়ারম্যান দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, বেশ কিছু প্রাথমিক স্কুলে আগে একজন শিক্ষক ছিল। আমরা বিগত কয়েক মাসে, সেখানে দুজন করে শিক্ষক দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এবার সেই সমস্ত ডবল শিক্ষক থাকা স্কুলগুলিতে যাতে তিনজন করে শিক্ষক দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।এর ফলে পঠন পাঠন উন্নত হবে।
নদীয়া জেলার ৩৭টি সার্কেলে প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। যেখানে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক রয়েছে। কিন্তু তারপরেও গ্রামের স্কুল ও শহরের স্কুলের মধ্যে শিক্ষকের সংখ্যায় অসামঞ্জস্য দেখা যায়। যা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যেও ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। অভিভাবকদের কথায়, গ্রামের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষক নেই। যার জন্য পঠনপাঠন হয় না। তাই বাধ্য হয়েই তাদের সন্তানদের বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করতে হয়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীয়া জেলায় ৩৫০টি স্কুলে ছাত্র সংখ্যার তুলনায় বেশি শিক্ষক রয়েছে। এই স্কুলগুলি মূলত শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। কিন্তু বেসরকারি স্কুলের দাপটে সেই সমস্ত জায়গার স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনেক কম। জানা গিয়েছে, শহরের স্কুলগুলোতে এমন বহু শিক্ষক রয়েছেন, যাঁরা বছরের বছর সেই স্কুলেই রয়েছেন। অতীতে বদলির অর্ডার এলেও তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে থেকে গিয়েছেন। যদিও যোগাযোগ ব্যবস্থা এই শিক্ষকের তারতম্যের অন্যতম কারণ বলেই মনে করছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। কারণ গ্রামের দিকে যান চলাচল কম থাকায় সারপ্লাস শিক্ষকরা সেই স্কুলগুলোতে যেতে চান না। নদীয়া জেলায় এরকম সারপ্লাস শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৭০০ জন। সেই জায়গায় নদীয়া জেলাজুড়ে ছাত্র সংখ্যার তুলনায় কম শিক্ষক রয়েছে তিনশোর বেশি স্কুলে। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সম্পাদক কিংশুক দাস বলেন, আমাদের সরকারের সর্বদাই একটাই উদ্দেশ্য, প্রাথমিক স্কুলের পঠনপাঠন উন্নত করা। শিক্ষক স্বার্থে খুব বেশি বিঘ্নিত না করে যদি শিক্ষক অপ্রতুল থাকা স্কুলে বদলি করা যায়, তা অত্যন্ত ভালো।
কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার বিজেপির শিক্ষক সেলের কনভেনার অমিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, গ্রামের স্কুল থেকে বহু শিক্ষক তৃণমূলের নেতাদের টাকা দিয়ে শহরের স্কুলে বদলি নিয়ে এসেছেন। তাই তাদেরকে পুনরায় গ্রামের স্কুলে পাঠানো যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।