নিজস্ব প্রতিনিধি, বলরামপুর: বলরামপুরের দাঁতিয়ায় শুধু একটিমাত্র পাথর খাদান নয়, ব্লকজুড়ে রমরমিয়ে চলছে আরও একাধিক ছোট-বড় খাদান। রয়েছে বহু পাথর ক্র্যাশারও। ব্লক প্রশাসনের দাবি, বলরামপুরে একটিও খাদান কিংবা ক্র্যাশারের অনুমোদন নেই। অর্থাৎ, সরকারি তথ্যে সবই অবৈধ। তা হলে সেগুলি চলছে কীভাবে? পিছনে কোনও প্রভাবশালীর হাত রয়েছে? কিসের স্বার্থে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে? প্রশাসনই বা কেন কোনও পদক্ষেপ করছে না? এইসব প্রশ্নকে ঘিরে এখন তোলপাড় বলরামপুর।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বলরামপুরের মূলত বেলা এবং দরদা অঞ্চলেই অবৈধ পাথর কারবারের আধিক্য বেশি। স্থানীয় প্রশাসন এবং শাসক দলের নেতাদের একাংশকে হাত করে অবৈধ করবার চালাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়দের পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের ব্যবসায়ীরাও যুক্ত রয়েছে এই অবৈধ কারবারে। বহু পাথর খাদান এবং ক্র্যাশার রয়েছে বনভূমি দখল করে। যা ১৯৮০ সালের বন সংরক্ষণ আইনের সম্পূর্ণ বিরোধী। এনিয়ে পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, ‘বনদপ্তরের নামে যে সমস্ত জমি নোটিফায়েড, সেইসব জমির তথ্য সংগ্রহ করে, তা দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি।’ যদিও স্থানীয়দের অভিযোগ, বনদপ্তর কোনওদিনই উদ্যোগী হয়নি দখল হয়ে যাওয়া জমি চিহ্নিত করে নিজেদের আয়ত্বে আনতে। যদি উদ্যোগী হতো তাহলে বনভূমিতে বছরের পর বছর এই অবৈধ করবার চলে কী করে?
এখানেই শেষ নয়, খাদানগুলিতে দেদার ডিনামাইট ফাটানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ। তাতে বিপন্ন পরিবেশ। সঙ্কটে বন্যাপ্রাণ, জীব বৈচিত্র। তাছাড়া, পাথর বোঝাই ওভারলোডেড গাড়ির যাতায়াতে বহু গ্রামীণ রাস্তার দফারফা হয়ে গিয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জনজীবন। ব্লকের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘বলরামপুরে একটিও বৈধ খাদান কিংবা ক্র্যাশার নেই।’ তাহলে প্রশাসনের নাকের ডগায় এই অবৈধ কারবার চলছে কী করে? কোনও রাখঢাক না করেই ওই আধিকারিকের দাবি, ‘আমরা কী চাইলেই বন্ধ করতে পারি? এগুলো আরও উঁচু লেভেলের ব্যাপার। আমার মতো ছোটখাটো অফিসারদের এব্যাপারে কথা না বলাই ভালো।’ অতিরিক্ত জেলা শাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর) রাজেশ রাঠোর বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
বিরোধীদের অভিযোগ, জেলার কতিপয় পদস্থ আধিকারিক এবং তৃণমূল নেতাদের একাংশের মদতেই চলছে এই অবৈধ কারবার। ব্লকের কয়েকজন দাপুটে নেতা এই অবৈধ কারবারে যুক্ত রয়েছে। সেইসব নেতাদের মাথায় হাত রয়েছে জেলার বর্ষীয়ান কিছু নেতার। বলরামপুরের বিজেপি বিধায়ক বাণেশ্বর মাহাত বলেন, ‘শাসক দলের নেতা থেকে শুরু করে আধিকারিকদের একাংশের কাছে মাসোহারা পৌঁছে যাচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে। তাই সবাই চুপ। ফলে, সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি পড়ছে। কারও কিছু যায় আসে না।’ তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলার চেয়ারম্যান শান্তিরাম মাহাত অবশ্য আগেই বলেছেন, ‘এব্যাপারে তাঁর কিছুই জানা নেই।’
জেলার বহু ব্যবসায়ী আইনি পথে পাথর খাদান করতে চেয়ে কয়েক বছর আগেই আবেদন জমা দিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। যদিও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মাসের পর মাস ধরে সেই আবেদনপত্র লাল ফিতের বাঁধনে আটক। এখানেই প্রশ্ন, বেআইনি খাদানগুলিকে পুষ্ট করার জন্যই কী আইন মেনে খাদান করার অনুমোদন দিচ্ছে না প্রশাসন? বিজেপির জেলা সভাপতি গৌতম রায়ের কটাক্ষ, ‘পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন কি আদৌও রয়েছে?’ নিজস্ব চিত্র