সংবাদদাতা, বালুরঘাট: খুনের পর ঘটনাস্থলে দিব্যি হাজির। পুকুর থেকে নাবালিকার দেহ উদ্ধার, শববাহী গাড়ির স্ট্রেচারে তোলা পর্যন্ত পুলিসকে সহায়তা করেছিল। জোর গলায় দিনভর বলে বেরিয়েছিল, যে এই কাজ করেছে, তাকে ছাড়ব না। দোষীর শাস্তি চাই। সেই মেসোই কি না নাবালিকাকে খুন করেছে! হলুদ গেঞ্জি ও একটি ফোন নম্বরের সূত্র ধরে নাবালিকার মেসোকে গ্রেপ্তার করল পুলিস। কুমারগঞ্জে পুকুর থেকে নাবালিকার অর্ধনগ্ন পচাগলা দেহ উদ্ধারের ঘটনায় আপাতত তাকে জেরা করছে কুমারগঞ্জ থানার পুলিস।
কেন এই খুন? অভিযুক্ত জানিয়েছে, ওই নাবালিকার বাবার সঙ্গে তার স্ত্রীর সম্পর্ক ছিল। তার স্ত্রীকে নাবালিকার বাবা কুপ্রস্তাব দিত। এই সন্দেহের বশে বাবাকে শায়েস্তা করতেই মেয়েকে খুন করে সে। যদিও নাবালিকার বাবা পরকীয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর অভিযোগ, মেসোই ধর্ষণ করে তাঁর মেয়েকে খুন করেছে। পুলিস অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে খুনের মামলা রুজু করেছে।
পুলিস সুপার চিন্ময় মিত্তাল বলেন, অভিযোগ পেয়ে অপহরণের মামলা শুরু করেছিলাম। নাবালিকাকে খুঁজে বের করার জন্য সবরকম চেষ্টা করা হয়েছে। পুরনো পারিবারিক শত্রুতার জেরেই এই খুন। ময়নাতদন্ত হলে বোঝা যাবে, ধর্ষণ হয়েছে কিনা। ফরেন্সিক টিম আসবে।
এদিন নাবালিকার বাবা বলেন, আমার সঙ্গে শ্যালিকার ওরকম কোনও সম্পর্ক ছিল না। শ্যালিকাকে ছোট থেকে মেয়ের মতো মানুষ করেছি। এখন বাঁচার জন্য ধৃত মিথ্যে অভিযোগ করছে।
পুলিস সূত্রে খবর, মৃত নাবালিকারা তিন বোন। শুক্রবার সকালে ওই নাবালিকার বাড়িতে কাঁঠাল দিতে এসেছিল অভিযুক্ত। নাবালিকাকে বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাবেও বলেছিল। বিকেলে নাবালিকা বাড়িতে না জানিয়েই এক কিমি দূরে রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ায়। সেখানে স্থানীয় এক ব্যক্তির মোবাইল থেকে নাবালিকা কোনও এক ব্যক্তিকেফোন করে। ওই ব্যক্তি পুলিসকে জানান, কিছুক্ষণ পর হলুদ গেঞ্জি পরা এক ব্যক্তি এসে ওই নাবালিকাকে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীর সেই বয়ান মতো হলুদ গেঞ্জি পরা ব্যক্তির খোঁজ শুরু করেন কুমারগঞ্জের আইসি রামপ্রসাদ চাকলাদার ও সেকেন্ড অফিসার অনন্ত মণ্ডলের নেতৃত্বে স্পেশাল টিম। একটু খোঁজ করতেই তাঁরা জানতে পারেন, পরিচিত ওই ব্যক্তির ফোন থেকে নাবালিকা তার মেসোকেই ফোন করেছিল। এদিকে, প্রমাণ লোপাটে ঘটনার পরই ওই ব্যক্তির নম্বর কললিস্ট থেকে ডিলিট করে ব্লক করে দেয় অভিযুক্ত। এতেই সন্দেহ বাড়ে পুলিসের। তাঁরা নাবালিকার বাড়িতে গিয়েঅভিযুক্তকে আটক করে। এরপরই পুলিস জিজ্ঞাসাবাদ করতেই মেসো খুনের কথা স্বীকার করে। কিন্তু ধর্ষণের কথা সে স্বীকার করেনি। সে জানিয়েছে, নাবালিকাকে টোটো করে প্রথমে মোহনা বাজারে নিয়ে গিয়ে চপ ও ঘুগনি খাওয়ায়। এরপরনির্জন ওই পুকুরের কাছে নিয়ে গিয়ে গলা টিপে খুন করেদেহ পুকুরে ফেলে দেয় সে।
এদিকে, অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হলে সাতদিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেহটি পচে যাওয়ায় বালুরঘাট হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা