সংবাদদাতা, কাটোয়া: কাটোয়ার রাজুয়া বাস স্ট্যান্ডে মুরগির ব্যবসা করত সাধারণ এক যুবক৷ সেই ব্যবসার আড়ালে বোমার মশলা সাপ্লাই করত সে। বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্তে নেমে এই তথ্য পেয়ে চক্ষু চড়কগাছ পুলিসের। পাশ্ববর্তী জেলা থেকেই বোমের মশলা সংগ্রহ করা হতো। এই যুবকই ইব্রাহিম শেখ। রাজুয়ায় বিস্ফোরণের পর থেকেই সে পলাতক ছিল। ধৃত জমির শেখে থেকে পুলিস জেনেছিল সেদিন ইব্রাহিম ওই পরিত্যক্ত বাড়িতে উপস্থিত ছিল বোমা বাঁধার সময়ে। সেই ইব্রাহিমকে অবশেষে গ্রেপ্তার করল পুলিস। ইব্রাহিম ছাড়া আরও দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করেছে কাটোয়া থানা। তাদের নাম, সফিক শেখ ও সফিক মণ্ডল৷ প্রত্যেকেরই বাড়ি রাজুয়া গ্রামে৷ বিস্ফোরণে ইব্রাহিম ও সফিক জখম হয়েও পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। মঙ্গলবার কাটোয়া মহকুমা এসিজেএম আদালতে ধৃতদের তোলা হলে বিচারক তাদের ৩ দিন পুলিস হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, ৪ জুলাই রাতে রাজুয়া গ্রামের বাসিন্দা তুফান শেখ বীরভূমের নানুর থেকে বোমা বাঁধার জন্য কয়েকজন দুষ্কৃতী নিয়ে এসেছিল৷ মৃত মিন্টু শেখের পরিত্যক্ত বাড়িতেই বসে বোমা বাঁধা হচ্ছিল৷ সেখানেই ঘটে যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ৷ ঘটনায় মৃত্যু হয় নানুরের যুবক বরকত কারিকরের৷ আর জখম হয় তুফান শেখ৷ তার আরও দুই সহযোগী ইব্রাহিম শেখ ও সফিক মণ্ডল পলাতক ছিল৷ ঘটনার পর তুফানকে গ্রেপ্তার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে রেখে চিকিৎসা চালাচ্ছে পুলিস৷ ৬ জুলাই বাড়ির মালিকের ছেলে আবুতাহার শেখ, আবুল কায়েম শেখ সহ গ্রামের বাসিন্দা নজরুল মোল্লা, জুমাত শেখ ও কেতুগ্রামের মাসুন্দির দুষ্কৃতী জমির শেখকে গ্রেপ্তার করে পুলিস৷ জমির শেখের মাধ্যমে নানুরের বরকতের সন্ধান পেয়েছিল তুফান৷ বরকত নিমেষে বোমা বাঁধতে পারত। আর নজরুল ও জুমাত এলাকায় পাহারা দিত।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত ইব্রাহিম শেখের রাজুয়া বাস স্ট্যান্ডে মুরগির মাংসের দোকান রয়েছে৷ তার আড়ালেই সে বোমের মশলা জোগাত তুফানকে। সেদিন দুষ্কৃতীরা চায়না বোমা বাঁধছিল৷ আর তারজন্য ১১ হাজার টাকা কেজি দাম দিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে বোমের মশলা কিনেছিল ইব্রাহিম৷ আর ধৃত দুই সফিক বোমা বাঁধতে সহযোগী হিসাবে কাজ করেছিল। ফরেন্সিক ও বম্ব স্কোয়াড সোমবার বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িটি থেকে ৭ কেজি বোমের মশলা উদ্ধার করেছে৷
ইব্রাহিম ও তুফান চৌধুরী দু' জনে অন্তরঙ্গ বন্ধু৷ এর আগে দু' জনেই আউশগ্রামে একসঙ্গে ছিনতাইয়ের মামলায় জেল খেটেছে৷ তুফান গ্রামের কয়েকজন ও ভিন জেলার কয়েকজনকে নিয়ে একটি টিম তৈরি করেছিল৷ পুরো টিম সেদিন একসঙ্গে পরিত্যক্ত বাড়িটিতে বসে বোমা বাঁধছিল৷ তবে ঠিক কী কারণে তারা বোমা বাঁধছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয় তদন্তকারীদের। জঙ্গল শেখের যুক্ত থাকার বিষয়েও পুলিস এখনও পরিষ্কার করে কিছু জানাতে পারেনি৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তুফান চৌধুরী ইদানিং বেশ কয়েকজন বালি কারবারির সঙ্গে মিশত। ননগর এলাকায় এক প্রভাবশালীর সে ঘনিষ্ট হয়ে উঠেছিল৷ ঠিক কী কারণে ওই প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় তুফান এসেছিল তাও এখনও জানা যায়নি৷ তবে ওই প্রভাবশালীর সঙ্গে নাকি বেশ কয়েকজন বাহুবলীর ওঠাবসা ছিল৷