• হা‌ইকোর্টে মামলা দায়ের দুই পরিবারের, শুনানি হবে কাল
    বর্তমান | ০৯ জুলাই ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট : দিল্লি পুলিসের দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে মুরারই ও পাইকরের দুই পরিবারের ছয় সদস্যকে। যার মধ্যে দুই শিশু সহ এক নাবালক রয়েছে। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলল পরিবার। মঙ্গলবার দিল্লি পুলিসের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হবে। 

    গত ২৬ জুন দিল্লি পুলিস দুই পরিবারের ছয় সদস্যকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশব্যাক করেছে বলে অভিযোগ। তাঁরা হলেন, দানিশ শেখ, স্ত্রী সোনালি বিবি ও তাঁদের পাঁচ বছরের সাবির শেখ। বাড়ি পাইকরে। এছাড়া রয়েছেন মুরারইয়ের ধীতোরা গ্রামের সুইটি বিবি ও তাঁর দুই সন্তান বছর পনেরোর কুরবান শেখ ও পাঁচ বছরের ইমাম শেখ। দানিশ শেখ, সুইটি বিবি দীর্ঘদিন ধরে দিল্লির ২৬ সেক্টর রোহিনী বাঙালি বস্তিতে থেকে ভাঙাচোরা জিনিস কেনা বেচার কাজ করতেন। সোনালির মামাতো বোন রশ্মী বিবি, যিনি পরিবার নিয়ে দিল্লিতে থাকেন। তিনি বলেন, ভারতীয় নাগরিক হিসাবে সোনালির আধার, ভোটারকার্ড এবং তাঁর বাবা ও দিদিমার সমস্ত ডকুমেন্ট দেখানো হয়। কিন্তু রেহাই মেলেনি। ওইদিন সন্ধ্যায় সোনালির বড়বোন করিশ্মার কাছে ৩০ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে দিল্লি পুলিস। সেইমতো ধারদেনা করে টাকা দেয়। কিন্তু ছাড়েনি। পরে আরও ৩০-৪০ হাজার টাকা দাবি করে। দিতে না পারায় পরের দিন সকালে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। সুইটির স্বামী নেই। ও কোনও টাকা দিতে পারেনি। তাঁকেও বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 

    পরিবারের দাবি, দিল্লির সিভিল অথরিটির রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারের একটি কাগজ তাঁরা হাতে পেয়েছে। তাতে এই ছ’জনকে বাংলাদেশের দেবুসর্পার পোষ্ট অফিসের অধীনে মোরাল গাংছেপুরপাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  

    এদিকে এদিন হাইকোর্টে দিল্লি পুলিসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন সোনালির বাবা বধূ শেখ এবং সুইটির শাশুড়ি নাজেরা বিবি। সঙ্গে ছিলেন পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের সক্রিয় সদস্য আরিফ শেখ। বধূও দিল্লিতে পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। ‌‌ তিনি ঈদে বাড়িতে আসেন। সোনালিরা থেকে যায়। বধূ  বলেন, ভারতীয় নাগরিকের ডকুমেন্ট দেখানোর পর ওখানকার পুলিসের দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় আমার মেয়ে, জামাই ও নাতিকে বাংলাদেশে জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোনও যোগাযোগ হচ্ছে না। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, নাতি বা তাঁরা কী খাচ্ছে, কোথায় রয়েছে জানি না। তাঁদের এদেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে সামিরুল সাহেব (তৃণমূল সাংসদ) খুব সাহায্য করছেন। দিল্লি পুলিসের বিরুদ্ধে মামলাও করলাম। পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সভাপতি মহম্মদ রিপন শেখ বলেন, গত ছয়মাসে দিল্লির তিনটি বস্তিতে আগুন লেগেছে। ওই বস্তিগুলিতে বীরভূম সহ এরাজ্যের নানা প্রান্তের শ্রমিক থাকেন। অনেকের বস্তি ভূস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। ডকুমেন্ট পুড়ে গিয়েছে। অনেকে সেই ঘটনার পর বাড়ি ফিরে আসে। কেউ পেটের দায়ে থেকে যান। এবার সেই শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে বাংলাদেশে পুশব্যাক করতে উঠিপড়ে লেগেছে দিল্লি পুলিস। 

    অন্যদিকে, সামিরুল বলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে গত কয়েকমাস ধরে মারাত্নকভাবে এঘটনা বেড়েছে। বাংলায় কথা বললে বাংলাদেশি। ডকুমেন্ট ভেরিফেকেশনের নামে শ্রমিকদের হেনস্তা করছে। কোনও কেস রেজিস্টার করছে না। ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দিচ্ছে। অথবা বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)