সংবাদদাতা, রামপুরহাট: অবৈধ সম্পর্কের কাঁটা সরাতেই মল্লারপুরের রাতমা গ্রামের প্রৌঢ় তামাল বাগদিকে খুন করে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনায় মৃতের বউমার প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। মঙ্গলবার ধৃতকে রামপুরহাট আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতকে ১০দিন পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বলে সরকারি আইনজীবী সৈকত হাটি জানিয়েছেন।
রাতমা গ্রামের উত্তরপাড়ায় বছর ৫৫-র তামালবাবুর বাড়ি। রবিবার দুপুরে বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করে গ্রামের মাঠে কাজে যান। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও না বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সোমবার দুপুরে গ্রামের পুকুরের পাড়ে মাটি খুঁড়ে তাঁর দেহ উদ্ধার ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। ঘটনাস্থলে মৃতের স্ত্রী সুশরী বাগদির মৌখিক বয়ানমতো পুলিস মৃতের প্রতিবেশী যুবক মনোরঞ্জন মণ্ডল সহ তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। সুশরী বলেন, বউমা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। কিছুদিন আগে সেটা আমরা দেখে ফেলি। প্রতিবাদ করায় অশান্তি হয়। পরে বাপেরবাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওরাই আমার স্বামীকে মেরেছে। দীর্ঘ জেরার পর রাতের দিকে মনোরঞ্জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। বাকি দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিস জানিয়েছে, মাস ছয়েক আগে মৃতের ছেলে স্ত্রী ও সন্তানকে রেখে প্রতিবেশী এক বধূকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এরপর তামালবাবুর বউমার সঙ্গে প্রতিবেশী মনোরঞ্জন অবৈধ সম্পর্কে জড়ায়। দিনকয়েক আগে মনোরঞ্জনের সঙ্গে বউমাকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলেন ওই প্রৌঢ় ও তাঁর স্ত্রী। এনিয়ে তীব্র অশান্তি হয়। জোর করে বউমাকে বাপেরবাড়ি সিউড়ি থানা এলাকায় পাঠিয়ে দেন তামাল। তখন থেকেই রাগে ফুঁসতে থাকে মনোরঞ্জন। পথের কাঁটা সরাতে তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।
পুলিসের দাবি, রবিবার মাঠেই লুকিয়েছিল মনোরঞ্জন। সন্ধ্যায় তামালবাবু বাড়ি ফেরার সময় পিছন থেকে তাঁর মাথায় কুড়ুলের বাঁট দিয়ে আঘাত করে মনোরঞ্জন। ওই প্রৌঢ় সংজ্ঞা হারিয়ে মাঠেই লুটিয়ে পড়েন। তাঁর মাথার সামনেও বাঁট দিয়ে আঘাত করা হয়। অভিযোগ, মৃত্যু নিশ্চিত করতে পাশের পুকুরপাড়ে গর্ত করে প্রৌঢ়কে পুঁতে দেয় মনোরঞ্জন। গভীর রাতে বাড়ি ফিরে এসে মনোরঞ্জন ঘুমিয়ে পড়ে। কেউ যাতে তাকে সন্দেহ না করে সেজন্য সোমরার দুপুরে তামালের দেহ নিয়ে হইচই হওয়ার সময়ও মনোরঞ্জন সেখানেই ছিল। যদিও শেষরক্ষা হল না।
তবে এলাকার অনেকেই বলছেন, মনোরঞ্জনের একার পক্ষে ওই প্রৌঢ়কে এভাবে খুন করা সম্ভব নয়। কিন্তু পুলিসের দাবি, প্রাথমিক জেরায় ধৃত যুবক একাই এই খুন করেছে বলেছে স্বীকার করেছে। আর কেউ যুক্ত আছে কি না তা জানতে ধৃতকে আরও জেরা করা হবে। সেইসঙ্গে খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে।