ওসিদের স্ট্যাম্প বানিয়ে এনওসি, ধরা পড়লে টাকার রফায় মুক্তি!
বর্তমান | ০৯ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নন্দকুমার: দুই থানার ওসির নাম করে জালিয়াতি। তাঁদের নামে ভুয়ো রাবার স্ট্যাম্প বানিয়ে নানা কাজে ব্যবহার। বিনিময়ে মোটা টাকাও আদায় করা হতো। ২০১৬ সাল থেকে দিব্যি রোজগার করে যাচ্ছিল দুই যুবক। শেষমেষ আইওসি’র চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের গেটে ঢোকার জন্য দেদার এনওসি ইস্যু করতেই পর্দাফাঁস। পুলিস এমন গুরুতর অভিযোগে দেবাশিস সাউ ও সুখেন মান্না নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। দেবাশিসের বাড়ি নন্দকুমার থানার হাঁসগেড়িয়ায়। সুখেনের বাড়ি হলদিয়ার ভবানীপুর থানা এলাকায়। গত ২ জুলাই সুতাহাটা থানার পুলিস তাদের আটক করে। ওইদিনই ছেড়ে দেওয়ার পর ৩ জুলাই নন্দকুমার থানার পুলিস গ্রেপ্তার করে।
কিন্তু ঘটনা হল, এমন গর্হিত অপরাধ করেও পার পেয়ে গিয়েছে দেবাশিস ও সুখেন। দু’জনের কাছ থেকে মিলেছে সংশ্লিষ্ট ওসির নামে ভুয়ো রাবার স্ট্যাম্প। তা সত্ত্বেও সুতাহাটা থানার পুলিস ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে দু’জনকে ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ দেবাশিসের স্ত্রী নমিতা সাউয়ের। আবার নন্দকুমার থানা দু’জনকে ধরে রফাতে আসার প্রস্তাব দিয়েছে বলে অভিযোগ। কেস হাল্কা করার নামে দেড় লক্ষ টাকা চাওয়া হচ্ছে বলে দাবি নমিতাদেবীর। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই তাজ্জব পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিস মহল। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছেন স্বয়ং পুলিস সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘দেবাশিস ও সুখেনের বিরুদ্ধে ভুয়ো স্ট্যাম্প ব্যবহার করার অভিযোগ সত্য। তবে, টাকা নেওয়া কিংবা চাওয়ার অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’
নন্দকুমার থানা থেকে ৫০০ মিটার দূরে হাঁসগেড়িয়া গ্রাম। এই গ্রামের ৩৭ বছরের যুবক দেবাশিস হলদিয়া সিটি সেন্টারে একটি কারখানায় কাজ করে। পাশাপাশি ভুয়ো রাবার স্ট্যাম্প বানিয়ে আইওসি’র চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের এনওসি দিত বলে অভিযোগ। দেবাশিসের কাছে নন্দকুমার থানার ওসির ভুয়ো স্ট্যাম্প ছিল। সেই স্ট্যাম্প পুলিস বাজেয়াপ্তও করেছে। অপরদিকে, ভবানীপুর থানা এলাকার বাসিন্দা সুখেন মান্নার কাছে সুতাহাটা থানার ওসি-র নামে ভুয়ো স্ট্যাম্প ছিল। ওই থানা এলাকার চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের এনওসি দিতে ওই স্ট্যাম্প ব্যবহার করত সুখেন।
২০১৬ সাল থেকে দু’জনে এই অবৈধ কারবারে যুক্ত বলে অভিযোগ। গত ২ জুলাই দেবাশিস ও সুখেন দু’জনে হলদিয়ায় নিজেদের কারখানায় যাওয়ার পর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটেনি। একজনের ফোন সুইচ অফ ছিল। অন্যজনের ফোনে রিং বেজে চললেও কেউ রিসিভ করেনি। এই অবস্থায় দেবাশিসের স্ত্রী নমিতা এক আত্মীয়কে নিয়ে স্বামীর কারখানায় পৌঁছে যান। সেখানে না পেয়ে সুখেনের বাড়িতে হাজির হন। এরপর দুই পরিবারের লোকজন সুতাহাটা থানায় গিয়ে তাঁদের দেখতে পান।
দেবাশিসের স্ত্রী বলেন, ‘সুতাহাটা থানার পুলিস আমাদের কাছ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। আমরা ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে দিয়েছি। বাকি টাকা নগদে দেওয়ার শর্তে স্বামী ও তাঁর বন্ধুকে ছাড়া হয়। তারপর আমার স্বামীকে নন্দকুমার থানা থেকে ডেকে পাঠানো হয়। বাড়িতে থাকা একটি নকল স্ট্যাম্প জমা দেওয়ার জন্য আমার স্বামী নন্দকুমার থানায় হাজির হলে পুলিস তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পাশাপাশি সুখেনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নন্দকুমার থানার তদন্তকারী অফিসার দেড় লক্ষ টাকা দাবি করছেন। তবেই কেস হাল্কা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।’
নকল স্ট্যাম্প কাণ্ডে দুই থানার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিস সুপার। এনিয়ে সুতাহাটা থানার ওসি সৌমিত্র ঘোষ বলেন, ‘আমরা কারও থেকে টাকা নিইনি। এনিয়ে তদন্ত হোক।’ নন্দকুমার থানার ওসি অমিত দেব বলেন, ‘পুলিসের বিরুদ্ধে টাকা চাওয়ার অভিযোগ অনেকেই করেন। দেবাশিস ও সুখেন দু’জনকেই আমরা পুলিস হেফাজতে নিয়েছি। তদন্ত চলছে।’