শ্রীকান্ত পড়্যা , তমলুক: বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী সুশীল ধাড়া, কুমারচন্দ্র জানা, কুমোদিনী ডাকুয়াদের জন্য বিখ্যাত মহিষাদল। স্বাধীনতা সংগ্রামের পীঠস্থান সেই মহিষাদল রাজ কলেজে গত এক দশক ছাত্র রাজনীতির নামে দাদাগিরি অব্যাহত। ইউনিয়ন রুমে দাদাগিরি করেই কলেজে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে চাকরি পেয়েছেন সুরেন্দু মান্না, দেবাশিস সাসকা, গৌতম প্রধান, শেখ মইবুল হকের মতো নেতারা। এই মুহূর্তে কলেজে মোট ১৯জন অস্থায়ী কর্মী আছেন। ২০১৩সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে। সেই তালিকায় অধিকাংশই ছাত্রনেতা। এছাড়াও বেশ কয়েকজন নেতার আত্মীয়স্বজনও কলেজে চাকরি পেয়েছেন। সেই তালিকায় মহিষাদলের বিধায়ক তথা গভর্নিং বডির সভাপতি তিলক চক্রবর্তীর ভাইয়ের স্ত্রী পাপিয়া চক্রবর্তীও আছেন। যদিও কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি তিলক চক্রবর্তী বলেন, আমার ভাইয়ের স্ত্রীর নিয়োগের সময় আমি গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলাম না।
কলেজের অস্থায়ী কর্মী সুরেন্দু মান্না ২০০৯সালে ওই কলেজের ছাত্র সংসদের জিএস ছিলেন। ২০১৫সালে তিনি অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ হন। পাশাপাশি আর এক প্রাক্তন জিএস দেবাশিসও কলেজে অস্থায়ী কর্মীর চাকরি পান। অস্থায়ী কর্মী হলেও এই দু’জন কলেজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দাদাগিরি করেন বলে অভিযোগ। সুরেন্দু এখন মহিষাদল যুব তৃণমূলের সভাপতিও। ভিআইপির মতো সর্বক্ষণ তাঁর চারপাশে ১৫-২০জন যুবক ঘিরে থাকে। আর দেবাশিস কলেজের অস্থায়ী কর্মী হয়েও ইট, বালি, স্টোনচিপ থেকে যাবতীয় সরঞ্জামের জোগানদার। কলেজে অস্থায়ী কর্মীর কাজ করে দিব্যি ঠিকাদারি করে যাচ্ছেন। ছাত্র রাজনীতির বয়স পেরিয়ে পুরোদস্তুর যুব সংগঠনের দায়িত্ব পেলেও ইউনিয়ন রুমে তাঁদের খবরদারি বন্ধ হয়নি। সেই আড্ডায় ভিড় জমান সঙ্গে থাকা বহিরাগতরাও। তাই হাইকোর্ট ইউনিয়ন রুমে তালা ঝোলানোর যে নির্দেশ দিয়েছে ভুক্তভোগী মহিষাদল রাজ কলেজের অনেক কর্মী থেকে ছাত্রছাত্রী তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
কলেজের মধ্যে নিজের আইবুড়ো ভাতের আসর বসিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন দেবাশিস। বর্তমানে মহিষাদল ব্লক যুব তৃণমূল নেতা। আর ইউনিয়ন রুমে কাজকর্ম নিয়ে সুরেন্দুর বিরুদ্ধে ভূরিভূরি অভিযোগ। কলেজ কাঁপানো সেইসব ছাত্র নেতাদের কলেজেই পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। খাতায় কলমে কলেজের ‘ক্যাজুয়াল’ কর্মী। কিন্তু, তাঁদের চালচলন অন্যদের থেকে আলাদা। কলেজে প্রশাসনিক কাজকর্মেও তাঁরা হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ। প্রিন্সিপালদের অবসর, বদলি লেগে থাকলেও ওই অস্থায়ী কর্মীরা কলেজকে ঘিরে ঘুঘুর বাসা বানিয়ে ফেলেছেন।
ফি-বছর কলেজে ছাত্র সংখ্যা কমছে। মহিষাদল রাজ কলেজেও মোট আসনের তুলনায় পড়ুয়া সংখ্যা কমছে। কলেজে পড়ুয়া সঙ্কটের মধ্যেও ছাত্র নেতাদের দাদাগিরি চলতে থাকায় অনেকে মাঝপড়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। তাই ইউনিয়ন নেতাদের দাদাগিরিতে অবিলম্বে রাশ টানা উচিত বলে অনেকেই মনে করছেন। তাঁরা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে স্বজনপোষণ রোধে উচ্চশিক্ষা দপ্তর থেকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ, অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগের পরই তাঁদের স্থায়ীকরণ করা হয়। অথচ, মেধাবী পড়ুয়ারা কলেজ পাশ করার পর চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা অশিক্ষক কর্মী সুরেন্দু মান্না বলেন, আমি একসময় ছাত্র রাজনীতি করতাম। ২০০৯সাল নাগাদ কলেজে ছাত্র সংসদে সাধারণ সম্পাদকও ছিলাম। তবে কলেজে দাদাগিরির অভিযোগ ঠিক নয়। কলেজের প্রিন্সিপাল গৌতমকুমার মাইতি বলেন, আমি সবে দু’বছর হল দায়িত্ব পেয়েছি। আমার জয়েন করার আগে থেকে অস্থায়ী কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে।