• নাবালিকার বিয়ের আসর থেকে পাকড়াও বিহারের শিক্ষক পাত্র
    বর্তমান | ০৯ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: সাগরপাড়ার খয়রামারি ঠাকুরপাড়ায় পাত্রের বাড়িতে বসেছিল বিয়ের আসর। চলছিল কলমা পড়া। আচমকা বিয়ের আসরে পুলিস হাজির হতেই চাঞ্চল্য ছড়ায়। উর্দিধারীদের দেখে আমন্ত্রিত ও পরিবারের লোকজন যে যার মতো ছুটে পালাতে শুরু করে। কিন্তু হবু বউকে ছেড়ে পালাতে পারেনি পেশায় স্কুলশিক্ষক বর। তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ধৃত যুবক বিহারের কাটিহারের একটি স্কুলে পড়ায়। শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও নাবালিকাকে বিয়ের ঘটনা জানাজানি হতেই ব্যাপক শোরগোল পড়েছে এলাকায়। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতের নাম শাহাবুল ইসলাম। ধৃতকে মুর্শিদাবাদ জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।  

    পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ষোলোর ওই নাবালিকার বাড়ি ডোমকলে। বিয়ের আসর থেকে তাকে উদ্ধার করে হোমে পাঠানো হয়েছে। সাগরপাড়া থানার ওসি মহম্মদ খুরশেদ আলম বলেন, বছর ৩২-এর ওই যুবক পেশায় শিক্ষক। তিনি বিহারের কাটিহারের পাহাড়পুর স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৬ বছরের নাবালিকাকে বিয়ে করার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

    জেলায় নাবালিকা বিয়ে আটকাতে জেলা প্রশাসন, পুলিস, সমস্ত সরকারি দপ্তর, স্কুল ও স্বেচ্ছাসসেবী সংস্থা একসঙ্গে উঠেপড়ে নেমেছে। সেখানেই এক শিক্ষকের এহেন ‘কীর্তি’ ঘিরে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়েছে। বাংলার শিক্ষক-শিক্ষিকারা যখন বাল্যবিবাহ রোধে র‍্যালি, পড়ুয়াদের সচেতন করছেন সেইসময় বিহারের এই শিক্ষক নিজেই ১৬ বছরের ওই নাবালিকাকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। তাঁর এই মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সাধারণ মানুষ।

    মুশির্দাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক(উন্নয়ন) চিরন্তন প্রামাণিক বলেন, কোনওভাবেই নাবালিকা বিয়ে বরদাস্ত করা হবে না। সমস্ত সরকারি দপ্তর, স্কুল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, কন্যাশ্রী ক্লাব থেকে শুরু করে সকলে একত্রিতভাবে সব জায়গায় নজরদারি চালাচ্ছে। কোনও নাবালিকার যাতে বিয়ে না হয় তারজন্য আমরা সব রকমভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি। পুলিসও যথেষ্ট তৎপর। মামলা রুজু করে অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাবালিকা বিয়ের সঙ্গে জড়িত ডেকরেটর থেকে শুরু করে ফুলওয়ালা, রাঁধুনি, নাবালিকার বাবা-মা এবং ছেলের বাড়ির লোকজন, সকলের বিরুদ্ধে আমরা কড়া ব্যবস্থা নেব। 

    জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার(লালবাগ) রাসপ্রীত সিং বলেন, আমরা খবর পেলেই বিয়ের আসর থেকে নাবালিকাকে উদ্ধার করছি। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করছি। বাল্যবিবাহ আটকাতে হবে। গত এক মাসে ৫৯টি মামলা রুজু হয়েছে। ৯৪জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

    জেলা সিডব্লুসির চেয়ারপার্সন সোমা ভৌমিক বলেন, ১৮ বছর বয়সের আগে কোনওভাবেই কারও বিয়ে দেওয়া চলবে না। মা-বাবা জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে নাবালিকা বা যে কেউ সরাসরি আমাদের জানাতে পারেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।
  • Link to this news (বর্তমান)