• মনুয়া কাণ্ডের ছায়া গোঘাটেও, প্রেমিককে দিয়ে স্বামীকে খুন
    বর্তমান | ০৯ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: বারাসতে মনুয়া-কাণ্ডের ছায়া সম্প্রতি উস্কে দিয়েছিল মেঘালয়ে হানিমুন মার্ডার। এবার দু’টি ঘটনারই ছায়া দেখতে পাচ্ছে গোঘাট! বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কের পথে কাঁটা সরাতে প্রেমিককে দিয়েই স্বামীকে হত্যা করায় গোঘাটের বধূ। যুবকের পচাগলা দেহ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল পুলিস। 

    বেশ কিছুদিন ধরেই নিখোঁজ ছিলেন রাজগ্রামের বাসিন্দা বরুণ দাস (৩১)। রবিবার সকালে সেখানকারই একটি পুকুর পাড় থেকে তাঁর পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। দু’দিন আগে কিছুটা দূরের একটি জায়গায় বরুণের সাইকেলটিও পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। ঘটনার তদন্ত শুরু হতেই পর্দা ফাঁস।  তদন্তকারীরা জানতে পারেন, স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কে বাধা হয়ে উঠেছিলেন বরুণ। তাই প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে রীতিমতো পরিকল্পনা করে খুন তাঁকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। সোমবার সন্ধ্যায় মৃতের বাবা বিশ্বজিৎ দাস গোঘাট থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে বরুণের স্ত্রী ও পার্শ্ববর্তী গণেশবাটির যুবক তন্ময় ওরফে তাপস দাসকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। মঙ্গলবার পুলিস জানিয়েছে, মদ খাইয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বরুণকে। খুনের সময় প্রেমিকা মিতাকে ফোন করে তা জানিওয়েছিল তন্ময়। রাত ১০ টার আশেপাশে প্রায় মিনিট পাঁচেক প্রেমিকাকে ফোন কলে রেখে পথের কাঁটা সরিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক যেভাবে মনুয়াকে ফোন করে তার স্বামী অনুপম সিংয়ের আর্তনাদ শুনিয়েছিল প্রেমিক অজিত রায়। পুলিস ইতিমধ্যেই তন্ময়ের দু’টি ও মিতার একটি অ্যানড্রয়েড ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে। 

    আরামবাগের এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন,  ‘অভিযুক্ত মহিলার সঙ্গে ওই যুবকের প্রায় দেড়  বছরের বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক ছিল। সেই কারণে বরুণের সঙ্গে মনোমালিন্য ছিল। বরুণ ও তন্ময়ের মধ্যেও পরিচয় ছিল। দু’জনের মধ্যে এনিয়ে ঝামেলাও হয়েছে। তার পরেই মৃতের স্ত্রী ও তন্ময় যৌথভাবে পরিকল্পনা করে খুন করে। খুনের সময় অভিযুক্তদের মধ্যে ফোনে কথাও হয়। অভিযুক্তরা জেরায় খুনের কথা কবুল করেছে। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ বরুণের বাবা বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘আমার ছেলেকে বউমা সহ আরও কয়েকজন মিলে খুন করেছে।  ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ 

    বরুণ পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি ছিলেন। রঘুবাটি পঞ্চায়েতের রাজগ্রাম এলাকার বাড়ি থেকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিলেন। সেদিন রাতে আর বাড়ি ফেরেননি। পুলিস জানিয়েছে, ওই রাতেই বরুণকে একটি পুকুর পাড়ে নিয়ে যায় তন্ময়। সেখানে বিপুল পরিমাণে তাঁকে মদ খাওয়ানো হয়। তারপর শ্বাসরোধ করে খুন করে তন্ময়। পরে দেহ সেখান থেকে কিছুটা দুরে নিয়ে গিয়ে ঝোপে ফেলে দেয়। 

    পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবা, মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ভরা সংসার ছিল বরুণের। দেহ উদ্ধারের পরপরই বরুণের স্ত্রীর উপর সন্দেহ হয় পরিবারের। মৃতের বাবার অভিযোগ, খুনের রাতেই বরুণের নাবালিকা মেয়ে সে কথা তার মায়ের কাছ থেকে জানতে পারে। কিন্তু কাউকে তা না জানানোর জন্য মিতা ভয় দেখায়। ফলে সে কিছু বলতে পারেনি। অবশেষে পুরো ঘটনা পরিবারকে সে খুলে বলে। তারপরই পুলিস পেশায় রাজমিস্ত্রি তন্ময়কে গোঘাটের লয়লা এলাকা থেকে আটক করে। ঘটনায় বরুণের মেয়েও শাস্তির দাবি জানিয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)