পুড়ছে ‘মেয়েটা’। সেই দহন চার ভিন্ন বয়সী পুরুষের বিবেকের আত্মোপলব্ধি ঘটিয়ে চলেছে। ওদের প্রত্যেকের জীবনেই প্রেম এসেছিল। পৌরুষের প্রতাপ সেই সত্যিকারের ভালোবাসার উপর উপেক্ষার প্রলেপ লেপে দিয়েছে। তখন বোঝেনি ওরা। কার্তিক, সাতু, হিমাদ্রি ও শশী। শ্মশানে ‘মেয়েটি’কে দাহ করতে এসে ওরা উপলব্ধি করে পুড়ছে ওদের পুরুষকারও।
শ্মশান সংলগ্ন ছাউনিতে চার পুরুষ শুয়ে বসে রয়েছে ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে। প্রায়ান্ধকার পরিবেশ। ‘অ্যাকশন’ বলতেই নড়ে চড়ে উঠল প্রেতের মত রহস্যময় শরীরগুলো। শশী বলে উঠল, ‘মেয়েটার নাম মালতি...’। পাশের ঘর থেকে ‘কাট’ বললেন পরিচালক শেখর দাশ। পনেরো বছর পর ফ্লোরে ফিরলেন বাদল সরকারের জনপ্রিয় নাটক ‘পাগলা ঘোড়া’ নিয়ে। স্বভূমি এন্টারটেইনমেন্টের প্রযোজনায় শতবর্ষে কিংবদন্তি নাট্যকারকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।
টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে সেট পড়েছে ‘পাগলা ঘোড়া’র। শটের ফাঁকে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত পরিচালক বললেন, ‘বিদেশে থাকাকালীন বাদলদা অনেক নাটক লিখেছিলেন সিনেমার স্মৃতি থেকে। ছোটবেলায় মঞ্চে দেখা ‘পাগলা ঘোড়া’ আমারও স্মৃতিতে রয়ে গিয়েছে। আমি স্মৃতি থেকে সিনেমা বানানোর চেষ্টা করছি। পুরুষকারের কোনও বদল ঘটেনি। শহরে বসে নারীদের প্রকৃত অবস্থান বোঝা সম্ভব নয়।’
নাটক তথা সিনেমায় প্রধান পাঁচটি চরিত্রে অভিনয় করছেন সুজন মুখোপাধ্যায় (কার্তিক), রজতাভ দত্ত (সাতু), ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় (হিমাদ্রি), জয়ন্ত হোর (শশী), গার্গী রায়চৌধুরি (মেয়েটা)। এছাড়া আছেন চান্দ্রেয়ী ঘোষ (লছমি)। চার অভিনেতার মতে, বাদল সরকারের ‘পাগলা ঘোড়া’ পুরুষকারের বিরুদ্ধে কথা বলে। মূল্যবোধ, অস্তিত্ববাদের ভিন্ন দিক উন্মোচন করে। একটি মেয়েকে দাহ করতে এসে চারটি চরিত্র আত্মবিশ্লেষণে বসে। অনুশোচনা ও অপরাধবোধ তাড়া করে বেড়ায়। রজতাভর মতে, ‘কথা প্রধান একটা নাটকের নতুন আঙ্গিক।’ সুজনের ব্যাখ্যায়, ‘বাদল সরকার মানে প্রতিবাদ, মোড় বদলানো ধারা। ‘পাগলা ঘোড়া’কে চলচ্চিত্রায়িত করার ক্ষেত্রে শেখর দাস সঠিক ব্যক্তি।’ ঋতব্রতর উপলব্ধিতে, ‘অস্থিরতার কথা রয়েছে। সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে বিভিন্ন ধরনের নারীদের উঠে আসার গল্প আছে।’ জয়ন্তর বিশ্লেষণে, ‘পাগলা ঘোড়া একটা উপলব্ধির বিষয়।’
‘এই মেয়েটি অনেকগুলো মেয়ের প্রতীক’, বললেন ‘মেয়েটি’ গার্গী রায়চৌধুরি। ‘পুরুষকারের দ্বারা, সামাজিক, আর্থিক, শারীরিক, মানসিকভাবে বঞ্চিত মেয়েদের কথা নিয়েই ‘পাগলা ঘোড়া’। বাদলবাবু তাই মেয়েটির কোন নাম দেননি। সে মারা গিয়েছে। তাকে দাহ করতে নিয়ে এসেছে চারজন পুরুষ। মেয়েটি আসলে জ্বলছে না জুড়োচ্ছে? এটাই আসল প্রশ্ন’, উপলব্ধি অভিনেত্রীর।