ছাত্র সংসদের ভোট জরুরি, মত স্পিকারের, কটাক্ষ বিরোধীর
আনন্দবাজার | ০৯ জুলাই ২০২৫
রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরুর পক্ষে এ বার মুখ খুললেন রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, প্রকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে সংসদ পরিচালনার দায়িত্ব থাকলে বহিরাগতদের ‘দাপাদাপি’ বন্ধ করা সম্ভব। শুধু তা-ই নয়, এই রকম কিছু প্রশাসনিক অব্যবস্থার কারণে পড়াশোনার পরিবেশও বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই বলে মনে করেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য নির্বাচনের জন্য আদালতের আদেশের জন্য অপেক্ষা করার কথা জানিয়েছেন।
দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজের মধ্যেই ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনেরই এক নেতা। এই নিয়ে বিরোধীদের লাগাতার সমালোচনার মধ্যে প্রায় এক দশক বন্ধ ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে মঙ্গলবার মুখ খুলেছেন স্পিকার। তিনি বলেন, ‘‘কলেজে অবশ্যই নির্বাচিত ছাত্র সংসদ থাকা উচিত। তা হলে এই রকম পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে না। প্রকৃত ছাত্রদের হাতে সংসদ পরিচালনা ও ছাত্র স্বার্থে প্রয়োজনীয় কাজকর্মের ভার থাকে।’’ ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রাখা নিয়ে বিরোধীরাও তৃণমূল সরকারকে বারবার বিঁধেছে। স্পিকারের কথায়, ‘‘অবিলম্বে সব কিছু বিচার-বিবেচনা করে সংসদ নির্বাচন শুরু করা উচিত। প্রাক্তনীদের নিয়ম মেনেই যাতায়াত করা উচিত।’’
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য এ দিন ৬৪ তম প্রাক্ সুব্রত কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গিয়ে এই সংক্রান্ত প্রশ্নে বলেছেন, ‘‘ছাত্র ভোট নিয়ে এখনও আদালতের নির্দেশ আসেনি। এলে সরকারকে জানাব। সরকার যা বলবে, সেই অনুযায়ী হবে। আমরা প্রস্তুত।’’ শিক্ষামন্ত্রী ‘সরকারকে জানাব’ বলতে মুখ্যমন্ত্রীকেই বুঝিয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রের মত।
বিরোধীরা অবশ্য কটাক্ষই করছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছাত্রদের অধিকার। আমরাও চাই, দ্রুত হোক। কিন্তু তৃণমূল জমানায় ছাত্র জমানায় নির্বাচন হওয়ার অর্থ তৃণমূলেরই ছাত্র-নেতাদের প্রাণহানি আর অঙ্গহানি। আমরা তাও চাই না।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘কত বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ, এত দিনে ওঁর মনে হল! এই স্পিকারের আমলেই বিধানসভায় আমরা এই দাবি নিয়ে আলোচনা করেছি আগে। এখন নানা ঘটনায় চাপে পড়ে সামাল দেওয়ার জন্য এ সব বলা হচ্ছে।’’
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিনে এ দিন শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের আয়োজন করা হয়েছিল বিধানসভায়। সেখানেই প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা নিয়ে স্পিকার বলেন, ‘‘সামগ্রিক ভাবে পড়াশোনার মানও সন্তোষজনক নয়। তাই গোটা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সকলেরই চিন্তাভাবনা করা উচিত।’’ নির্বাচিত ছাত্র সংসদ ছাড়া ইউনিয়ন রুম ব্যবহারে কলকাতা হাই কোর্ট সম্প্রতি যে নির্দেশ দিয়েছে, তা সমর্থন করে স্পিকার বলেন, ‘‘সংসদ যদি না থাকে, তা হলে তো এই রকম কোনও ঘর বা অফিসের প্রয়োজনও থাকে না।’’