বিপ্লবীরা হয়ে গেলেন ‘সন্ত্রাসবাদী’! বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস প্রশ্নপত্র ঘিরে বিতর্ক
প্রতিদিন | ১০ জুলাই ২০২৫
সম্যক খান, মেদিনীপুর: দেশের স্বাধীনতায় প্রাণ দিয়েছেন। অত্যাচারী ইংরেজ শাসকদের থেকে দেশ বাঁচিয়েছেন। নিজেদের প্রাণের তোয়াক্কা করেননি তাঁরা। সেই বিপ্লবীদেরকেই সন্ত্রাসবাদীদের দলে ফেলল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস প্রশ্ন। ইংরেজরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে দেখত। স্বাধীন ভারতে কেন তাঁদের এই নামে ডাকা হবে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে জেলার শিক্ষামহলে।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ থেকে শুরু করে শহিদ প্রশস্তি সমিতি। ওই দুই সংগঠনের সম্পাদক কিংকর অধিকারী ও প্রাণোতোষ মাইতি বলেছেন, প্রশ্নপত্রে বিপ্লবীদের যেভাবে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত আপত্তিজনক ও দুরভিসন্ধিমূলক। অবিলম্বে ভুল স্বীকার করে সর্বসমক্ষে বিবৃতি দাবি করেছেন তাঁরা। এই প্রশ্ন মুদ্রণ বিভ্রাট বলে ঢোক গিলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বুধবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সেমেস্টারের ইতিহাস অনার্সের সি ১৪-টি পেপার তথা মডার্ণ ন্যাশনালিজম ইন ইন্ডিয়া বিষয়ে পরীক্ষা ছিল। সেই প্রশ্নপত্রে ‘ক’ বিভাগের ১২ নম্বর প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে ‘মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নাম করো যারা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হন?’ এই প্রশ্নপত্র সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনার ঝড় বইয়ে গিয়েছে জেলার শিক্ষামহলে।
কিংকরবাবু, প্রাণোতোষবাবুরা বলেছেন, ত্রিশের দশকে দেশজুড়ে আইন অমান্য আন্দোলনের সময় মেদিনীপুরের অত্যাচারী জেলাশাসক জেমস পেডি স্বাধীনতা সংগ্রামকে দমন করতে জেলাজুড়ে অত্যাচারের নারকীয় পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের প্রবল অত্যাচারকে রুখতে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের নির্ভীক সৈনিকরা সেদিন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। মেদিনীপুরের বিপ্লবীরা স্বাধীনতা সংগ্রামে রক্তলেখা ইতিহাস তৈরি করেছিলেন।
১৯৩১ সালের ৭ই এপ্রিল বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত ও বিপ্লবী জ্যোতি জীবন ঘোষ মেদিনীপুর শহরের কলেজিয়েট স্কুলের অভ্যন্তরে অত্যাচারী জেলাশাসক পেডিকে হত্যা করেন। তারপরের বছর ১৯৩২ সালের ৩০ এপ্রিল জেলা বোর্ডের মিটিংয়ে বিপ্লবী প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য ও বিপ্লবী প্রভাংশু পাল অত্যাচারী জেলাশাসক ডগলাসকে হত্যা করেন। এরপর ১৯৩৩ সালের ২রা সেপ্টেম্বর পুলিশ গ্রাউন্ড ফুটবল মাঠে বিপ্লবী অনাথ বন্ধু পাঁজা ও বিপ্লবী মৃগেন দত্ত জেলাশাসক বার্জকে হত্যা করেছিলেন।
সেই ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস চর্চায় বিপ্লবীরা সন্ত্রাসবাদী হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন বলে ক্ষোভ দুই সংগঠনের। শহীদ প্রশস্তি সমিতির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকেও মেল পাঠানো হয়েছে। যদিও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নির্মল মাহাতো বলেছেন, ইংরাজিতে প্রশ্নটি ঠিকই আছে। তবে বাংলায় ‘সন্ত্রাসবাদী’ শব্দটি কোটেশনের মধ্যে রাখার কথা। এটা নিছকই মুদ্রণ বিভ্রাট। কী করে এই ভুল হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।