• তোলা না পেয়ে ৩৮ লরির টায়ার পাংচার, ভাঙচুর, বিক্ষোভ, সাসপেন্ড ৪ এসআই
    বর্তমান | ১০ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: নিউ আলিপুর থানার পিছনেই রেল স্টেশন। ঠিক তার সংলগ্ন রাস্তাতেই পণ্যবাহী গাড়ির সারি। দিন থেকে রাত—এই রাস্তাই লরির ‘পার্কিং লট’। কিন্তু রাতেও রাস্তায় পার্কিং কেন? এই ‘অপরাধে’ পণ্যবাহী গাড়ি থেকে তোলাবাজির অভিযোগ উঠল খোদ নিউ আলিপুর থানার বিরুদ্ধে। ক্ষোভের বিস্ফোরণ হল সেখানেই। লরি মালিক ও চালকরা জানিয়ে দিলেন, টাকা দিতে পারবেন না। তখনই ৩৮টি লরির টায়ার পুলিস পাংচার করে দিয়েছে বলে অভিযোগ। লরি মালিক ও চালকরা দাবি করেছেন, এর পাশাপাশি একটি লরির উইন্ডস্ক্রিনও ভেঙে দিয়েছেন উর্দিধারীরা। এই অভিযোগে নিউ আলিপুর থানার সামনে জমায়েত করে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। কিছুক্ষণের জন্য অবরুদ্ধ হয়ে যায় নিউ আলিপুর মোড়। আর এই বিক্ষোভের আঁচ পৌঁছে যায় লালবাজারের অন্দরমহলেও। তারপরই হস্তক্ষেপ করে প্রশাসনের শীর্ষ মহল। তোলাবাজি, লরির কাচ ভাঙচুর ও টায়ার পাংচার করে দেওয়ার অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয় নিউ আলিপুর থানার চার সাব ইনসপেক্টরকে।

    বুধবার সকাল ৮টা থেকেই শুরু হয় বিক্ষোভ। লরিচালকরা জানান, ‘প্রতি রাতে এক-একটি লরি থেকে ১০০ টাকা করে নেয় পুলিস। কিন্তু, মঙ্গলবার রাতে এক লরিচালকের কাছে টাকা ছিল না। তাই তিনি পুলিসের মন জোগাতে পারেননি। সেই আক্রোশেই প্রথমে চালকের সঙ্গে বচসায় জড়ান দুই সাব ইনসপেক্টর। পরে গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। আউটসাইড রিয়ার ভিউ মিররও ভেঙে দেন উর্দিধারী।’ এক লরিচালকের দাবি, থানায় লিখিত ডেপুটেশন জমা দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টেশন সংলগ্ন এক বাসিন্দা বলেন, ‘এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই রাস্তার উপরে লরি দাঁড়ায়। থানা তাদের থেকে টাকাও নেয়। কিন্তু ইদানীং দেখছি, রাতের বেলা এখানে থানাই অভিযান চালাচ্ছে। টাকা না দিলে পরপর বহু লরির চাকার হাওয়া খুলে দিচ্ছে। তাতেই লরিচালকরা পুলিসকে তোলা দিতে অস্বীকার করে।’ স্থানীয়দের অভিযোগ, সেই ঘটনার পরই থানা থেকে প্রচুর পুলিস এসে লরিচালকদের উপর চড়াও হয়। ভাঙচুরও চালায়।

    এদিন সকালেই বিক্ষোভের খবর পৌঁছয় কলকাতা পুলিসের ডেপুটি কমিশনার (সাউথ) প্রিয়ব্রত রায়ের কাছে। সূত্রের খবর, লালবাজারের নির্দেশে গোটা ঘটনার দ্রুত বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন উচ্চপদস্থ কর্তারা। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন ডিসি। তিনি স্বয়ং সেই ফুটেজ দেখেন। সূত্রের দাবি, সেই ভিডিওতে নিউ আলিপুর থানার চারজন এসআইকে লরি ভাঙচুরের সময় উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে। ডিসি (সাউথ) বলেন, ‘এই ঘটনায় চারজন পুলিসকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। চারজনই সাব ইনসপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার।’ এ নিয়ে লালবাজারের এক পদস্থ কর্তার দাবি, মাসখানেক আগে দু’টি লরির মাঝে পড়ে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে মৃত্যু হয়ে এক পথচারীর। কাছেই বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াতের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লরি। তবে কোনও তোলা চাওয়া হয় না বলেই জানিয়েছেন ওই পদস্থ কর্তা। 
  • Link to this news (বর্তমান)