• খিদিরপুরে মাটির নীচে নামল দেশের বৃহত্তম বোরিং মেশিন
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১০ জুলাই ২০২৫
  • দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো প্রকল্প নতুন করে গতি পেল। দীর্ঘ আইনি জটিলতা ও জমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হওয়ার পর, অবশেষে পুরোদমে শুরু হল কলকাতা মেট্রোর পার্পল লাইনের নির্মাণকাজ। বৃহস্পতিবার খিদিরপুর থেকে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত ১.৭ কিমি পথের সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে।

    এই পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে খিদিরপুর থেকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭ মিটার নীচে ‘টানেল বোরিং মেশিন’ (টিবিএম) ব্যবহার করে সুড়ঙ্গ খোঁড়া হচ্ছে। রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড-এর তত্ত্বাবধানে, কলকাতা মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার পি উদয়কুমার রেড্ডির উপস্থিতিতে কাজের শুভ সূচনা হয়। এই প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে দুটি অত্যাধুনিক টিবিএম— ‘দুর্গা’ ও ‘দিব্যা’। আপ লাইন অর্থাৎ পার্ক স্ট্রিটমুখী সুড়ঙ্গ খননের দায়িত্বে রয়েছে ‘দুর্গা’, আর ডাউন লাইন অর্থাৎ জোকামুখী সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে ‘দিব্যা’। প্রায় ৯০ মিটার দীর্ঘ ও ৬৫০ টন ওজনের এই যন্ত্রদুটি আনা হয়েছে তামিলনাড়ু থেকে।

    জোকা-এসপ্ল্যানেড মেট্রো করিডরে খিদিরপুর থেকে পার্কস্ট্রিট পর্যন্ত টানেল তৈরির কাজের জন্য টানেল বোরিং মেশিনটি ব্যবহার হবে। খিদিরপুর শ্যাফট থেকে নামানো হয়েছে সেই মেশিন। প্রথমে খিদিরপুরের সেন্ট থমাস স্কুল চত্বর থেকে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত ১.৭ কিমি পথ তৈরি করবে এই টানেল বোরিং মেশিন। এরপর ভিক্টোরিয়া থেকে পার্ক স্ট্রিট অংশের ৯০০ মিটার টানেল তৈরি করবে এই মেশিনটি। সেখান থেকে লাইনটি এসপ্ল্যানেডের সঙ্গে যুক্ত হবে।

    প্রসঙ্গত, এই রুটের কাজ চলাকালীন ময়দান এলাকায় গাছ কাটার অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্ট ও পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। যদিও কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টে জানান, ৮২৭টি গাছ কেটে ফেলা হয়নি বরং প্রতিস্থাপনের জন্য উপড়ে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৪টি গাছ ইতিমধ্যেই অন্যত্র রোপণ করা হয়েছে। নতুন করে আর কোনও গাছ কাটার প্রয়োজন নেই বলেও আশ্বস্ত করা হয়। তারপরই জট কাটে জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো প্রকল্পের।

    শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সেন্ট্রাল এমপাওয়ার্ড কমিটির অনুমতি ছাড়া আর কোনও গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হবে না। এই নির্দেশের পরই কাজের গতি বাড়ে এবং মোমিনপুর থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত অংশে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শুরু হয়।

    বর্তমানে জোকা থেকে মাঝেরহাট পর্যন্ত অংশে বাণিজ্যিক পরিষেবা চালু রয়েছে। গোটা করিডর চালু হলে পরিষেবার মান অনেকটাই উন্নত হবে বলে মনে করছেন যাত্রীরা। আপাতত ভূগর্ভস্থ চারটি স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে একটি পঞ্চম স্টেশনও যোগ হতে পারে এই লাইনে। রাজ্য সরকারের তরফে জমি সংক্রান্ত জটিলতা কাটানো হয়েছে। ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকেও মেট্রো নির্মাণে ‘নো অবজেকশন’ দেওয়া হয়েছে।

    জোকা-বিবাদী বাগ প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকায় ক্ষোভ ছিল এলাকাবাসীর মধ্যে। তবে নতুন করে কাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন স্থানীয়রা। অনেকেই আশাবাদী, এই গতিতে কাজ চললে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই জোকা থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত মেট্রো চলাচল শুরু হবে। কলকাতার মেট্রো যোগাযোগ ব্যবস্থায় এটি এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হতে চলেছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)