লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম পূরণের নামে প্রতারণা! ২ বছর ধরে অন্যের অ্যাকাউন্টে কলকাতার বধূর টাকা
প্রতিদিন | ১০ জুলাই ২০২৫
অর্ণব আইচ: লোক মারফৎ লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম পূরণ করে জালিয়াতের ফাঁদে এক গৃহবধূ। মাসের পর মাস তাঁর নামে আসছে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর টাকা। অথচ রাজ্য সরকারের এই জনপ্রিয় প্রকল্পের একটি টাকাও হাতে পাননি তিনি। বরং এই ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে তিনি যা তথ্য পেলেন, তাতে তাঁর চক্ষু চড়কগাছে! একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তাদের কাছ থেকে জানতে পারেন, তাঁর নামে একটি অজ্ঞাত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হচ্ছে। অথচ ওই অ্যাকাউন্টে তাঁরই নামের সঙ্গে রয়েছে সেনাদের ইস্টার্ন কম্যান্ডের সদর ফোর্ট উইলিয়ামের ঠিকানা। অথচ সেনাবাহিনী অথবা ফোর্ট উইলিয়ামের সঙ্গে ওই গৃহবধূ বা তাঁর পরিবারের কারও কোনও সম্পর্ক নেই। এভাবে মাসের পর মাস লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর তিনি মধ্য কলকাতার গিরিশ পার্ক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, গৃহবধূর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত বছর দু’য়েক আগে। গিরিশ পার্ক এলাকার সালিয়া লেনের বাসিন্দা এক গৃহবধূ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জন্য অ্যাকাউন্ট খুলতে মধ্য কলকাতার একটি পুর অফিসে যান। সেখানে এক ব্যক্তি নিজেকে পুরকর্মী বলে পরিচয় দেয়। সে তাঁকে একটি ফাঁকা ফর্মে সই করতে বলে। জানায়, বাকি ফর্ম সে ভর্তি করে দেবে। মহিলার নাম, পরিচয় সে আলাদা কাগজে লিখে নেয়। বিবেকানন্দ রোডে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি ও তাঁর পরিচয়পত্রের ফটোকপি, তাঁর ছবি ওই ব্যক্তিকে দেন। তাঁকে বলা হয়, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার অ্যাকাউন্ট খুলতে মাস চারেক সময় লাগবে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে তাঁর মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে জানানো হয় যে, তাঁর নামে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা না আসায় তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি খোঁজখবর নিতে শুরু করলেও কোনও সমস্যার সুরাহা হয়নি।
গত বছরের জুন মাসে তিনি ফের বোরো অফিসে গেলে তাঁর সঙ্গে ওই ব্যক্তির যোগাযোগ হয়। ওই গৃহবধূ সমস্যার কথা জানালে ফের তাঁকে একটি ফর্ম দিয়ে তাতে সই করতে বলা হয়। আগের বারের মতো এবারও তিনি ওই ব্যক্তিকে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেন। কিন্তু ফর্মে কী লেখা হয়েছে, তা তিনি দেখেননি। এভাবে কয়েক মাস কেটে যায়। এই বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে তাঁর মোবাইলে ফের একটি মেসেজ ঢোকে। তাঁকে একটি আইডি নম্বর পাঠানো হয়। কিন্তু গত বারের মতো এবারও তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা না এলে ফের তাঁর সন্দেহ হয়। কিছুদিন আগে তিনি গিরিশ পার্ক এলাকার একটি সাইবার কাফেতে যান। তিনি জানতে পারেন যে, গত বছরের মার্চ মাস থেকে তাঁর নামে তৈরি হওয়া একটি অ্যাকাউন্টে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা আসছে। কিন্তু অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সোনাপট্টির যে অ্যাকাউন্টে তাঁর নামে এসে টাকা জমা পড়ছে, সেই অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। সম্পূর্ণ তাঁর অজ্ঞাতে ওই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করা হচ্ছে। কোনও ব্যক্তি তাঁর জাল সই করে ওই টাকা তুলেও নিচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। এর পর তাঁর নামের সঙ্গে ঠিকানা দেখে আরও হতবাক হয়ে যান ওই গৃহবধূ। ঠিকানাটি সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কম্যান্ডের সদর দপ্তর ফোর্ট উইলিয়ামের। এমনকী, ওই অ্যাকাউন্টে যে মোবাইল নম্বরটি উল্লেখ করা হয়েছে, সেটিও তাঁর নয় বলে গৃহবধূর দাবি।
বধূর অভিযোগ, এভাবে রাজ্য সরকারের প্রকল্প লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ২০ হাজার টাকা ওই অ্যাকাউন্টে এসে জমা পড়েছে। ওই টাকা মাঝেমধ্যেই এটিএম কার্ডের সাহায্যে তুলে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করার পর ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাছ থেকে নথি চেয়েছেন গিরিশ পার্ক থানার পুলিশ আধিকারিকরা। ব্যাঙ্কের নথি হাতে আসার পরই ব্যাঙ্কের কোনও গাফিলতি, না কি কোনও চক্র এই জালিয়াতির পিছনে কাজ করছে, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।