• প্রেমের টানে পাসপোর্ট করিয়ে বিদেশে পাড়ি, 'মন্দ' কপালে জুটল গুপ্তচর তকমা, বেধড়ক মারধর করে তুলে দেওয়া হল সেনার হাতে...
    আজকাল | ১১ জুলাই ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: গুপ্তচর সন্দেহে এবার ভারতীয় পাসপোর্টধারীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভালোবাসার টানে পাসপোর্ট করিয়ে সম্পূর্ণ বৈধভাবে বাংলাদেশে পাড়ি দিয়েছিল মুর্শিদাবাদের রাণীনগর থানা এলাকার কলবলিতলার বাসিন্দা সোহেল আলি। 

    গত শনিবার রাতে সোহেল বাংলাদেশের রংপুরের হারগাছ থানার সারাই উল্লাসপাড়া গ্রামে তাঁর প্রেমিকার বাড়িতে যান। কিন্তু সেখানে পৌঁছতেই স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে ভারতের গুপ্তচর সন্দেহে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করে। পরে তাঁকে সেনাবাহিনীর হাতেও তুলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর কাছে থাকা বৈধ নথিপত্র, মোবাইল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। গুপ্তচর নন নিশ্চিত হওয়ার পর সোহেলকে সোমবার সকালে চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্তে ভারতীয় ইমিগ্রেশন অফিসে হস্তান্তর করা হয়। এরপর সোহেল ফিরে আসেন ভারতে। কেরালায় পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কর্মরত সোহেল বাংলাদেশ থেকে ফিরে রানীনগরে নিজের গ্রামে না গিয়ে সোজাসুজি কেরালা চলে যান। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি সমাজমাধ্যমে রংপুরের বাসিন্দা সুমনা নামে এক মহিলার সঙ্গে পরিচয় হয় সোহেল আলির। তারপর ভালবাসার টানে বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তান থাকা সত্ত্বেও  সুমনার সঙ্গে দেখা করতে তিনি বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উত্তেজনার আবহে তাঁকে ভারতীয় গুপ্তচর সন্দেহ করে স্থানীয় বাসিন্দারা বেধড়ক মারধর করে। 

    এই বিষয়ে সোহেল বলেন, 'একটি জনপ্রিয় সমাজমাধ্যমে বাংলাদেশি মহিলা সুমনার সঙ্গে আমার আলাপ হয়। তারই সূত্র ধরে আরও ২০ জনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তাঁরা সবাই সমাজমাধ্যমে লাইভ করত এবং নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করে গল্পগুজব করত। এইভাবে তারা মাসে ১০-১২ হাজার টাকা রোজগার করত।' সোহেল বলেন, 'সুমনা আমাকে বাংলাদেশে যেতে বলেছিল আর তার জন্যই আমি বৈধভাবে পাসপোর্ট তৈরি করে বাংলাদেশে যাই। কিন্তু বাংলাদেশি নাগরিকরা আমাকে ভুল বোঝে ও গুপ্তচর সন্দেহে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। তাদেরকে আমি অনেকবার বোঝাবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা কোনও কিছু না বুঝেই আমার উপর অত্যাচার করে আমাকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। তারপর সেনাবাহিনীও আমাকে জোর করে ভারতে পাঠিয়ে দেয়।' 

    সোহেল জানিয়েছেন,  'গত শুক্রবার বৈধভাবে আমি মালদহের মোহদিপুর সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলায় পৌঁছই। শুক্রবার সেখানে থাকার পর শনিবার সকালে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। রংপুর শহরের 'মডার্ন' নামের এক জায়গায় আমাকে সুমনা নামতে বলেছিল। আমি সেখানেই নামি এবং সুমনা এসে টোটোয় করে আমাকে তাঁর বাড়ি নিয়ে যায়। তাঁর আন্তরিকতায় কোনও ঘাটতি ছিল না। কিন্তু তার পাড়ার লোকজন আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল। আমি সেটা দিতে না পারায় আমাকে বেধড়ক মারধর করে এবং আমার সঙ্গে থাকা ৩৮০০ ভারতীয় টাকা এবং ৫৫০০ বাংলাদেশি টাকা ছিনিয়ে নেয়।'

    অন্যদিকে, ছেলের এই কীর্তিতে হতবাক বাবা মর্জেম আলি। বিরক্তি নিয়েই তিনি বলেন, 'বারবার ছেলেকে বাংলাদেশে যেতে নিষেধ করেছিলাম। এখানে তাঁর স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। বাংলাদেশি মেয়েটি নাকি তাকে ডেকে পাঠিয়েছিল এবং সেও বিবাহিতা। তবে বাংলাদেশ থেকে ফিরে ছেলে আর বাড়ি ফেরেনি। সোজাসুজি তাঁর কাজের জায়গা কেরলে চলে গিয়েছে।'
  • Link to this news (আজকাল)