‘মার...মেরে চিরে দে, থানা-পুলিস আমি দেখে নেব’, নিদান সিভিক ভলান্টিয়ারের, পুরুলিয়ায় মোবাইল চোর সন্দেহে যুবককে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬
বর্তমান | ১১ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: ‘মার...মেরে চিরে দে। থানা-পুলিস আমি দেখে নেব’-নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এমনটাই নিদান দিয়েছিলেন পুরুলিয়ার চালকতোড়ে যুবক হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার। যুবকের যখন মৃত্যু হয়, তখন পুরো বিষয়টি টাকা দিয়ে মধ্যস্থতা করারও চেষ্টা করেছিল অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার ও আর এক অভিযুক্ত তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বাপন মহাপাত্র। এমনটাই অভিযোগ মৃতের পরিবারের।
মোবাইল চুরির অপবাদে চালকতোড়ের এক যুবককে পিটিয়ে খুন করা হয়। ঘটনায় বুধবারই অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার মলয় পুইতুণ্ডি, তৃণমূলের অঞ্চল যুব সভাপতি বাপন, আকাশ কৈবর্ত, বিভীষণ কৈবর্ত, বাপি কৈবর্ত ও রাধকান্ত কৈবর্তকে আটক করে পুলিস। মলয়, বাপন ও আকাশের বাড়ি চাকলতোড়েই। বাকি তিনজনের বাড়ি বলরামপুর থানার বড় উরমা গ্রামে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হয়। অভিযুক্তদের চারদিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ধৃত ওই সিভিক ভলান্টিয়ার ও তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে সরব বাসিন্দাদের একাংশ।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, চালকতোড়ের ওই যুবক ওড়িশায় কাজ করতেন। মাঝেমধ্যে বাড়ি আসতেন। গ্রামেরই বাসিন্দা আকাশের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল। বড় উরমা গ্রামের বাসিন্দা তথা আর এক অভিযুক্ত বিভীষণ আবার তাঁদের আত্মীয়। সেই সুবাদে তিনি কিছুদিন আগে আকাশের সঙ্গে বিভীষণদের বাড়ি গিয়েছিলেন। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ওইদিন বিভীষণের বাড়ি থেকে একটি মোবাইল ফোন চুরি যায়। সেই সন্দেহ গিয়ে পড়ে ওই যুবকের উপর। গত সোমবার ওই সিভিক ভলান্টিয়ার, তৃণমূল নেতা বাপনকে সঙ্গে নিয়ে আকাশরা চড়াও হয় তাঁর বাড়িতে।
মৃতের মা বলছিলেন, ওরা সবাই মিলে আমার ছেলেকে বেধড়ক মারতে থাকে। বাপন মাটিতে ফেলে লাঠি মারতে থাকে। ওই সিভিক ভলান্টিয়ার মলয় বলছিল, মার...মেরে চিরে দে। থানা পুলিস আমি সব দেখে নেব। মারতে মারতে ওরা ছেলেটাকে বাড়ি থেকে টেনে রাস্তায় নিয়ে যায়। আমি বলি ছেলে যদি চুরি করে থাকে তাহলে ওকে থানায় দাও। তখন মলয় বলে, থানা কী করবে? আমি তো আছি।
মৃতের নাবালিকা বোন বলে, দাদা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিল। বলছিল যে ও মোবাইল চুরি করেনি। কিন্তু, দাদার কথা কেউ শোনেনি। গ্রামেরও কেউ এগিয়েও আসেনি। দাদা অসুস্থ হয়ে পড়লে ওরা বলে দাদা নাকি নাটক করছে।
অভিযোগ, এরপর ওই যুবকে একটা বাইকে তুলে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে পুরুলিয়া মেডিক্যালে ভর্তি করে দেওয়া হয়। পরিবারকে বলা হয় ওই যুবক বিষ খেয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। টাকা পয়সা দিয়ে মীমাংসা করার জন্যও মৃতের পরিবারকে চাপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
স্থানীয়দের দাবি, পুলিসের মতোই হাবভাব ছিল ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের। এলাকায় তোলাবাজি করত। কেউ এক ট্রাক্টর বালি কিনলে কিংবা বাঁধে মাটি কাটলেও মলয়কে দিতে হতো কমিশন। এলাকায় কোনও কিছু হলে মলয়ই তার মীমাংসা করত। বসাত খাপ পঞ্চায়েত। এলাকায় কেউ তার কথার অমান্য হলেও পুলিসকে দিয়ে থানায় ডাকা হতো বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠছে, পুলিসের প্রছন্ন মদত না থাকলে কী এত দাপট দেখাতে পারত ওই সিভিক ভলান্টিয়ার? মৃতের সম্পর্কের দাদা দেবজিৎ মিশ্র বলেন, অভিযুক্তরা সবাই প্রভাবশালী। শাস্তি আদৌ হবে তো? যদিও পুলিস সুপারের আশ্বাস, অভিযুক্তদের কাউকে রেয়াত করা হবে না।