এনজিওর আড়ালে পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তি করত রাকেশ ও মুকেশ
বর্তমান | ১১ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: ২০২২ সালের ২২ মার্চ একটি এনজিও তৈরি করেছিল পাক চর রাকেশ গুপ্তা এবং মুকেশ রজক। রাকেশ সভাপতি এবং মুকেশ সম্পাদকের পদে বসে। ট্রেজারার ছিল অন্য একজন। এনজিও অফিসের ঠিকানা ছিল মেমারি। ওই এনজিওর নিজস্ব ওয়েবসাইট সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক অ্যাকাউন্ট ছিল। সেইসব অ্যাকাউন্টে তারা ধর্মপ্রচারের কাজ করে বলে জানায়। কিন্তু আদতে তারা ধর্মান্তরের কাজ করত বলে অভিযোগ। তাদের ভাড়াবাড়িতে হামেশাই ধর্মচর্চার আসর বসত। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাকেশ নিজের বক্তব্য রাখত। এসবের আড়ালে পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তি চালিয়ে যেত তারা। ধর্মচর্চা করতে আসা অনেকের কাছেই তারা ভোটার, আধারকার্ডের জেরক্স নিয়ে রাখত। এসব তথ্য ব্যবহার করেই তারা তুলত বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন।
মেমারি পাওয়ার হাউস পাড়ার বাসিন্দারা বলেন, পাক চরদের ভাড়াবাড়িতে অনেক বহিরাগতর আনাগোনা লেগে থাকত। বাড়িতে ধর্মচর্চার আসর বসায় কেউ তা নিয়ে সন্দেহ করত না। বাড়ির মালিক সেখানে থাকতেন না। তাই ধর্মচর্চার আড়ালে বাড়ির ভিতরে কী হচ্ছে তা কেউই টের পায়নি। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের কাছে থেকে একাধিক মোবাইল উদ্ধার হয়েছে। প্রতিটিতে দু’টি করে সিমকার্ড রয়েছে। ধৃত দু’জন নিজেদের ধর্ম প্রচারক বলে দাবি করায় অনেকেই তাদের বিশ্বাস করত। সেই বিশ্বাসকে তারা কাজে লাগায়।
ধৃতদের ‘শিষ্য’ শুধু পূর্ব বর্ধমান নয়, বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে। তারা বাইরে ধর্ম সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে যেত। শিষ্যর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় সিমকার্ড কেনার জন্য নথি পেতে তাদের সমস্যা হতো না। তাদের এনজিওর অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা জমা হয়েছে। পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ওই অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছে কি না, সেটাও তদন্তকারীরা খোঁজ নিয়ে দেখছেন। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ওই এনজিওর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাক গুপ্তচররা ওই দু’জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওয়েবাসাইটে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছিল। পরে তারা বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে এই দু’জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রাকেশের সঙ্গেই পাক গুপ্তচরদের বেশি কথা হতো। মেমারির বাসিন্দারা বলেন, ধৃতরা এলাকার লোকজনদের সঙ্গে খুব বেশি মেলামেশা করত না। দুজনের একজন কয়েক মাস আগে জিমে ভর্তি হয়। সেখানে অনেকেই তার সঙ্গে পরিচয় করে। তারপর আচমকাই সে জিমে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। বোঝাই যাচ্ছে, অত্যন্ত পরিকল্পনা করেই তারা আইএসআইয়ের কথামতো কাজ করছিল। কিন্তু এদেশের দুঁদে গোয়েন্দারাও ওত পেতে ছিল। সময় মতো দু’জনকেই তারা জালে তুলে নেয়। তাদের সঙ্গে আর কেউ এই কাজে যুক্ত ছিল কি না, তদন্তকারীরা তা খতিয়ে দেখছেন। তাঁদের দাবি, দেশ বিরোধী কাজ করলে কেউই পার পাবে না।