• পানাগড়েও ধৃত পাক চরের ডেরার সন্ধান
    বর্তমান | ১১ জুলাই ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: পানাগড়ে বেশ কিছুদিন ডেরা বেঁধেছিল পাকচর রাকেশ গুপ্তা। সে মেমারি থেকেও হামেশা পানাগড়ে যেত। তার এই ডেরা বাঁধা ও যাতায়াত বেশ ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। কারণ,  পানাগড়ে রয়েছে সেনা ছাউনি। স্বাভাবিকভাবেই এলাকাটি স্পর্শকাতর। রাকেশ সেনাদের কর্মকাণ্ড কিংবা ছাউনির ছবি তুলে থাকতে পারে। সেইসব তথ্য রাকেশ পাঠাতে পারে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের কাছে। এমন সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। পাশাপাশি একটা আশঙ্কাও কাজ করছে। সেটা হল, রাকেশ ও মুকেশ দুই পাক চর তাদের মোবাইল মোবাইল থেকে বহু তথ্য মুছে ফেলেছে। সেগুলি উদ্ধার করতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হতে পারে। 

    গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতরা বিভিন্ন রাজ্যে একাধিকবার ঘুরতে গিয়েছে। কি কারণে তারা ভিন রাজ্যে যেত, সেটাও দেখা হচ্ছে। দু’জনে  তদন্তে সেভাবে সহযোগিতা করছে না। বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তর তারা এড়িয়ে যাচ্ছে। তারা দাবি করেছে, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণাই নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কয়েক আগে একজনের সঙ্গে আলাপ হয়। সে নিজেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী বলে দাবি করে। গোটা ভারতে তারা যৌথভাবে সমাজসেবার কাজ করতে চায় বলে জানিয়েছিল। ওই দুই পাকচরের একটি এনজিও রয়েছে। কাজ করার জন্য তাদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার ডিল হয়। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলার জন্য তারা ওটিপি চেয়েছিল বলে দুই পাকচরের দাবি। যদিও তদন্তকারীরা তাদের এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে। তাদের মতে, সব জেনেই মোটা টাকার লোভেই ওই দুই চর মোবাইল নম্বর এবং ওটিপি তাদের কাছে পাঠাত। আর সেই মোবাইল ভারত-বিরোধী কাজে ব্যবহার করা হতো বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, একটি মোবাইল নম্বর পিছু তাদের কয়েক হাজার টাকা দেওয়া হতো। বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করেও তারা টাকা পেত। সেই টাকায় তারা বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরতে যেত। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে সেনা ছাউনির ছবি তারা পাঠিয়ে থাকতে পারে পাক গুপ্তচর সংস্থার কাছে। বিশেষ করে পানাগড় সেনাছাউনির ছবি বা তথ্য জোগাড় করা তাদের কাছে কোনও বিষয় নয়। 

    গোয়েন্দারা জেনেছেন, রাকেশ হাতের তালুর মতো চিনত পানাগড় এবং আসানসোলের ভৌগোলিক অবস্থানকে। সে কয়েক বছর আগেই পানাগড়ে বাড়িভাড়া নিয়েছিল। সেখানে মা এবং ভাইকে নিয়ে থাকত। কাজ করত  মেমারি এলাকায়। পাশাপাশি পানাগড়ের ওই ভাড়াবাড়িতেও প্রায়শই যাতায়াত করত সে। তা নিয়েই উদ্বিগ্ন তদন্তকারীরা। এদিন মেমারির লোকজন বলছিলেন, ওই দুই পাকচর দীর্ঘদিন ধরে মেমারিতে থাকলেও বাসিন্দারা টেরই পাননি। সবাই দু’জনকে ধর্মপ্রচারক হিসেবে জানত। তবে তাদের আয়ের উৎস কি, সেটা কারও জানা ছিল না। এলাকারই এক বাসিন্দার কথায়, বেশ কিছুদিন আগে একটি সেলুনে রাকেশের সঙ্গে পরিচয় হয়। সে দাবি করে আসানসোলের একটি টেকনিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করে। এর বেশি কোনও তথ্য সে দেয়নি। এলাকায় তারা কোনও দিনই বিবাদে জড়ায়নি। ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু গোপনে তারা দেশের সর্বনাশ করতে সর্ষের মধ্যে ভুত হয়ে কাজ করছিল, সেটা বোঝা যায়নি। 
  • Link to this news (বর্তমান)