• প্রেমের টানে বাংলাদেশে গিয়ে বিপত্তি, ‘র’ এজেন্ট সন্দেহে গণপিটুনি খেয়ে বাড়ি ফিরে এল রানিনগরের যুবক
    বর্তমান | ১১ জুলাই ২০২৫
  • সংবাদদাতা, ডোমকল: ব্যবসার দৌলতে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেম। দেখা করতে পাড়ি জমিয়েছিলেন বাংলাদেশে। প্রেমিকার বাড়িতে পৌঁছতেই ঘিরে ধরেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের সন্দেহ হয় যুবকটি আসলে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’এর এজেন্ট। আর কালক্ষেপ না করেই চলতে থাকে গণধোলাই। সেখান থেকে কোনওরকমে প্রাণে বেঁচে দেশে ফিরলেন রানিনগরের বুধুরপাড়ার যুবক সোহেল শেখ। ফিরে এসে তাঁর উপলব্ধি—‘প্রেম এখন থাক। বেঁচে ফিরেছি, সেটাই বড় কথা।’

    বুধুরপাড়ার কলবলিতলায় বাড়ি সোহেলের। বাড়িতে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ভরা সংসার। মাধ্যমিকের গন্ডিও না পেরোনো বছর তিরিশের সোহেল দীর্ঘদিন ধরেই কেরলে একটি কোম্পানির গাড়ির চালক। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ব্যবসা করেন। সূত্রের খবর, একটি অনলাইন সোশ্যাল অ্যাপের এজেন্সি নিয়েছেন সোহেল। ওই অ্যাপে একটু কড়ি খসালেই সুখ-দুঃখের গল্প করা যায়। সেখানে বন্ধুত্ব গড়া যায় দেশ-বিদেশের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে। সোহেল জানিয়েছে, ওই অ্যাপের এজেন্সি নেওয়া রয়েছে তাঁর। সেই সূত্রেই ওপার বাংলার জনা কুড়ি যুবতীর সঙ্গে যোগাযোগ। তাঁরা সবাই সোহেলের এজেন্সিতে টাকার বিনিময়ে কাজ করতেন। তাঁদের মধ্যেই এক যুবতীর সঙ্গে প্রেম জমে সোহেলের। শুরু হয় গল্প। ওই যুবতীর টানেই গত সপ্তাহের ৪ জুলাই শুক্রবার মালদহের সীমান্ত দিয়ে বৈধভাবে ওপার বাংলায় যান সোহেল। রাজশাহীতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে শনিবার সন্ধ্যায় রংপুরে ওই যুবতীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। সোহেলের দাবি, প্রেমিকার বাড়িতে ঢুকতেই এলাকার লোকজন ঘিরে ধরে তাঁকে। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। নিজেকে ভারতীয় হিসেবে পরিচয় দিতেই  ‘র’-এর এজেন্ট বলে সন্দেহ করে। শুরু হয় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। সঙ্গে বেধড়ক মারধর। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল। তাঁরাই সোহেলকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। সেখানে যুবকের মোবাইল ও পাসপোর্ট, ভিসা খতিয়ে দেখেন তাঁরা। পরে সোহেলকে হারাগাছ থানায় হস্তান্তর করেন সেনাবাহিনীর অফিসাররা। সেখান থেকে তাঁকে ভারতে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সেখানকার পুলিস। 

    রবিবার লালমনিরহাট বুড়িমারি সীমান্ত দিয়ে এপারে আসেন সোহেল। যদিও তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। সেখান থেকেই কেরলে চলে গিয়েছেন।  সোহেল ফোনে বলছিলেন, ‘আমার এজেন্সিতে ওখানকার অনেকেই কাজ করেন। আমি তাঁদের পাশাপাশি প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ওর বাড়িতে পৌঁছনোর পরই এলাকার লোকজন ঘিরে ধরে আমাকে। আমি  ভারতীয় পরিচয় দিতেই ওঁরা আমাকে গুপ্তচর বলে মারধর শুরু করে। অথচ আমি ‘র’ কি জিনিস, সেটাই জানিনা। আমার ভিসার মেয়াদ থাকলেও তাঁরা জানান, ভারতীয় হাই কমিশন থেকে আমাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে। বৈধভাবে ওপার বাংলায় গিয়ে এইরকম ঘটনা ঘটবে ভাবিনি।’ সোহেলের দাদা জুয়েল আলি বলেন, ‘আমরাও বেশি কিছু শুনিনি। আমার ভাই বিবাহিত। স্ত্রী ও এক ছেলে রয়েছে। সংসার রেখে ওখানে চলে যাবে, তা ভাবিনি। কি আর বলব? খারাপ লাগছে।’
  • Link to this news (বর্তমান)