• দ্বিতীয় বিয়ে করায় ‘বাড়ি ছাড়া’, স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে প্রকাশ্যে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা বধূর
    এই সময় | ১১ জুলাই ২০২৫
  • নতুন সংসার পাতাই নাকি তাঁর অপরাধ! এই অভিযোগে জোর জবরদস্তি বাড়ি ছাড়া করার অভিযোগ এক বধূ ও তাঁর পরিবারকে। পুলিশ-প্রশাসন থেকে নেতা নেত্রাীর দরজায় দরজায় ঘুরেও লাভ হয়নি। অপমানে স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন বধূ। বর্ধমানের কার্জন গেটের সামনে এই কাণ্ড ঘটাতেই পুলিশ তাদের আটকে দেয়, পরে তাদের বুঝিয়ে বর্ধমান থানায় নিয়ে যায়।

    বর্ধমানের বাদশাহী রোডের শর্মাপাড়ার ঘটনা। জানা গিয়েছে, মায়ের দ্বিতীয়বার বিয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে মহিলার ছোট ছেলে, তাতেই রাগ তাঁর বড় ছেলের। মায়ের বিয়েতে আপত্তি তুলে দলবল জুটিয়ে মারধর, ভাঙচুর করে ওই বধূ-সহ তাঁর নতুন স্বামী ও ছোট ছেলেকেও ঘর থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বড় ছেলের বিরুদ্ধে।

    ঘর থেকে পরিবার-সহ বিতারিত ওই মহিলার নাম রীনা ঘোষ। পেশায় পরিচারিকা। প্রায় ছ’বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। দীর্ঘদিন পর ফের জীবনে আসে ভালোবাসার ছোঁয়া। পেশায় রাজমিস্ত্রি রাকেশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় রীনার। রাকেশ মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের বাসিন্দা। মায়ের এই সম্পর্কে সম্পূর্ণ সমর্থন ছিল ছোট ছেলের। বরং সেই রীতিমতো মায়ের সামাজিক বিয়ের সমস্ত আয়োজন করে । পাড়ার লোককে নিমন্ত্রণ করে দাঁড়িয়ে থেকে মা ও রাকেশ সরকারের চার হাত এক করে সে। নতুন করে সংসার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে নয়া জীবনে পা রাখতে না রাখতেই ফের বিপত্তি।

    রীণা ঘোষের দাবি, সকলের সম্মতিতে এই বিয়ে হলেও, এটা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তুলকালাম শুরু করে তাঁর বড় ছেলে বিকাশ ঘোষ। রীনার স্বামী রাকেশের অভিযোগ, বিয়ের পর বড় ছেলে দলবল জুটিয়ে মারধর করে তাঁদের। ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট করে। বাড়িছাড়া করে দেয় তাঁদের তিনজনকে। মা প্রেম করে কেন বিয়ে করেছে তা নিয়েই তাঁর ক্ষোভ। ছোট ভাই সমর্থন করায় তাঁকেও রেয়াত করেনি সে।

    রীণা ঘোষ জানিয়েছেন, তারা এই ঘটনা নিয়ে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিতাড়িত হওয়ার পর গত প্রায় ৫ দিন কেটে গেলেও মেলেনি সুরাহা। বিচার তো দূর, জোটেনি মাথা গোঁজার ঠাঁইও। পাঁচদিন ধরে বর্ধমান স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাত কাটাতে হচ্ছে তাঁদের।

    পুলিশ ও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কাছে বারবার সুবিচার পাইয়ে দেবার আবেদনে করেও বিফল হয়ে শেষমেষ বৃহস্পতিবার বিকেলে বর্ধমানের কার্জন গেটের সামনে রীনাদেবী, তাঁর স্বামী রাকেশ ও ছোট ছেলেকে নিয়ে আসেন। এর পরই গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে তিনজনই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আচমকা এই ঘটনায় গোটা এলাকায় সাধারণ মানুষের ভিড় জমে যায়। যদিও খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পৌঁছে সুবিচারের আশ্বাস দিয়ে তিনজনকেই বর্ধমান থানায় নিয়ে যান।

    রীনাদেবীর গলায় আফসোস, ‘আমি তো সামাজিক নিয়ম মেনে বিয়ে করেছি। কোনও অন্যায় তো করিনি। আমি এর বিচার চাই।’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়েরও কাছেও তাঁর আবেদন, তাঁদের সুস্থভাবে বাঁচার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।

  • Link to this news (এই সময়)