ভাঙড়ে খুন তৃণমূল নেতা। দলীয় বৈঠক সেরে ফেরার পথে বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির কাছেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হলেন ভাঙড়ের চালতাবেড়িয়া অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি। মৃতের নাম – রজ্জাক খাঁ (৩৮)। বৃহস্পতিবার রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি স্পট ভিজিট করেন এবং ভাঙড় থানায় বৈঠক করেন। এই ঘটনায় তৃণমূল অভিযোগের আঙুল তুলেছে আইএসএফ-এর দিকে। শাসক শিবিরের অভিযোগ, আইএসএফ আশ্রিত দুষ্কৃতীরা রজ্জাককে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর পরে এলোপাথাড়ি ভাবে কুপিয়েছে। এই ঘটনায় ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
তৃণমূল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজারের কাছে ওই তৃণমূল নেতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। পরে এলোপাথাড়ি কোপানো হয় বলেও অভিযোগ। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে তড়িঘড়ি উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এলাকায় সক্রিয় নেতা হিসেবেই পরিচিত রজ্জাক। শুধু তাই নয়, বিধায়ক সওকত মোল্লা ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত তিনি। রাজনৈতিক কারণে হামলা কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, একসময় আরাবুল ইসলামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকলেও ইদানিং রজ্জাক বিধায়ক শওকত মোল্লার ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন। তৃণমূল নেতার গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে ভাঙড়ের ডিসি সৈকত ঘোষের নেতৃত্বে বিরাট পুলিস বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। বৃহস্পতিবার রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে আঘাতের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।’
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমে পরপর তিনটি গুলি করা হয় রজ্জাককে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা বলেন, ‘আইএসএফ আশ্রিত সমাজবিরোধীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ার কারণেই রাজনৈতিকভাবে না পেরে এখন খুনের রাজনীতি শুরু করেছেন নওশাদ সিদ্দিকী। পুলিশকে বলব, অবিলম্বে এই সমাজবিরোধীদের গ্রেপ্তার করতে হবে ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’
এই বিষয়ে ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে আইএসএফ কর্মী-সমর্থকেরা যুক্ত নয়। তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের ফলে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ প্রশাসন সঠিকভাবে তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিক।’ এদিকে এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তাল হয়ে ওঠে চালতাবেড়িয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকা। দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারির দাবিতে রাস্তায় নামেন তৃণমূল সমর্থকেরা। এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী। খতিয়ে দেখা হচ্ছে সিসিটিভি ফুটেজও।
প্রসঙ্গত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গত বছর ভাঙড়ের চারটি থানা কলকাতা পুলিশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২ জানুয়ারি ২০২৪-এ সেই প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়। কলকাতা পুলিশের আওতায় এসেছে ভাঙড়, উত্তর কাশীপুর, চন্দনেশ্বর ও পোলেরহাট থানাগুলি। নতুন থানা হিসাবে কলকাতা পুলিশের আওতায় এসেছে চন্দনেশ্বর ও পোলেরহাট।