• সাতসকালে দাঁত মাজছিল নাবালিকা, আচমকা হুড়মুড়িয়ে পাথর পড়তে শুরু করে গায়ে, ভয়াবহ ঘটনা মুর্শিদাবাদে...
    আজকাল | ১১ জুলাই ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলায় এক প্রাচীন প্রবাদ রয়েছে 'রাখে হরি মারে কে' । আর সেই ঘটনাই যেন শুক্রবার সকালে সত্যি হল মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা থানার বেনিয়াগ্রাম পঞ্চায়েতের কেন্দুয়া গ্রামের বাসিন্দা তামান্না খাতুনের সঙ্গে।  প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী, বছর সাতেকের তামান্না শুক্রবার পাথর ভর্তি একটি ট্রাক্টরের তলায় বেশ কিছুক্ষণ চাপা থাকার পরও রক্ষা পেয়েছে প্রাণে। তবে পাথরের চাপে ওই নাবালিকার ডান পা ভেঙে গিয়েছে । বেনিয়াগ্রাম  হাসপাতালে চিকিৎসার পর ওই নাবালিকাকে উন্নততর চিকিৎসার জন্য মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে 'রেফার' করে দিয়েছেন ডাক্তাররা। 

    স্থানীয় সূত্র জানা গিয়েছে, এনটিপিসি পুলিশ ফাঁড়ি থেকে কেন্দুয়া গ্রাম পর্যন্ত  বাংলা এবং ঝাড়খণ্ডের মধ্যে সংযোগকারী রাস্তার অবস্থা বেশ কিছুদিন ধরে বেহাল হয়ে রয়েছে। ওই রাস্তার পাশেই বাড়ি ছোট্ট তামান্নার। শুক্রবার সকালে আরও দু'জনের সঙ্গে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত মাজছিল ওই নাবালিকা। 

    আরও পড়ুন: ভাঙড়ের পর মালদহ, রাজ্যে ফের খুন তৃণমূল নেতা, জন্মদিনের পার্টিতে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, নেপথ্যে শিউরে ওঠা কারণ

    স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেই সময়ে ঝাড়খন্ড থেকে পাথর বোঝাই একটি ট্রাক্টর বাংলায় প্রবেশ করছিল। রাস্তায় বড় গর্ত থাকায় ট্রাকটরটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং সমস্ত পাথর তামান্নার উপর গিয়ে পড়ে। গ্রামবাসীরা বলেন, তামান্না বেশ কিছুক্ষণ পাথরের তলায় চাপা পড়েছিল। সকলে মনে করেছিল দুর্ঘটনায় ওই নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বরাতজোরে অলৌকিক সে  প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। 

    দুর্ঘটনার পর গ্রামবাসীরা ট্রাক্টরটিকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যায় এবং কোদাল-বেলচা দিয়ে পাথর সরানো শুরু করেন। মিনিট দশেকের মধ্যে সম্পূর্ণ পাথর সরিয়ে গ্রামবাসীরা ছোট্ট তামান্নাকে  পাথরের তলা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এই দুর্ঘটনার পর  গ্রামবাসীরা দীর্ঘক্ষণ বাংলা-ঝাড়খন্ড সংযোগকারী রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। 

    গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, গ্রামের ওই রাস্তা দিয়ে প্রত্যেকদিন কয়েকশো পাথর , বালি ,স্টোন চিপস, বোল্ডার , ফ্লাই অ্যাশ ভর্তি ওভারলোডেড  ডাম্পার ,লরি এবং ট্রাক্টর যাতায়াত করে। তার ফলে গ্রামে রাস্তা বলে কিছুই নেই এবং দুর্ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিত্যসঙ্গী। মাস খানেক আগেই ওই এলাকায় একটি বেপরোয়া পাথর বোঝাই লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল এক নাবালিকার।  স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান মহম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ' রাস্তা খারাপ থাকার জন্য একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।  তবে  ওই ছাত্রী বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। '

    যদিও বেনিয়াগ্রাম পঞ্চায়েতের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, রাস্তাটি খারাপ অবস্থায় পড়ে রয়েছে তা পঞ্চায়েতের পক্ষে মেরামত করা সম্ভব নয়। তাদের বক্তব্য ওই রাস্তা দিয়ে প্রত্যেকদিন কয়েকশ ওভারলোড গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি হওয়ার পরই ভেঙে যায়। তাই জেলা পরিষদ বা রাজ্য সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া এই রাস্তা মেরামত করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

    ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন, 'ওই রাস্তার খারাপ অবস্থার কথা গ্রামবাসীরা ইতিমধ্যে আমাদের নজরে এনেছে। অম্বুজা গেট থেকে এনটিপিসি ফাঁড়ি পর্যন্ত রাস্তাটির সংস্কারে রাজ্য সরকার প্রায় ১.৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এছাড়া জেলা পরিষদের টোল গেট থেকে কেন্দুয়া গ্রাম পর্যন্ত রাস্তার সংস্কারে আরও প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। দু' টি রাস্তা সংস্কারের কাজ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী। রাস্তা ঠিক হয়ে গেলে এই ধরণের দুর্ঘটনা আর ঘঠবে না।' অন্যদিকে ফরাক্কা থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর তারা ট্রাক্টরটিকে আটক করেছেন, তবে তার চালক পলাতক।
  • Link to this news (আজকাল)