সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয় ‘অগ্নীশ্বর’। উত্তম কুমার অভিনীত এই সিনেমা অনেকেরই দেখা। কর্তব্যে অবিচল এক ডাক্তারের কাহিনি মুগ্ধ করেছিল দর্শককে। তবে আজও বাংলার গ্রামেগঞ্জে দেখা মেলে অগ্নীশ্বরদের। যেমন মিলল হুগলির চুঁচুড়ার ইমামবাজার এলাকায়। পিতৃবিয়োগের শোক বুকে চেপে রেখে রোগী দেখলেন ডাক্তারবাবু শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
রোগীকে সুস্থ করে তোলাই তাঁর কাজ। পেশা চিকিৎসা হলেও আসলে তিনি মানবসেবায় ব্রতী। শুক্রবার সকালেও রুটিন মেনে নিজের চেম্বারে রোগী দেখতে গিয়েছিলেন। বাড়ির নীচেই ডাক্তারবাবুর চেম্বার। রোগী দেখার মাঝেই জানতে পারেন বাবা তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর। চেম্বারে তখন ঠাসা রোগী। ডাক্তারবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে অসহায় মুখগুলো। দূর দূরান্ত থেকে রোজই রোগীরা আসেন তাঁর কাছে। তাঁদেরকে কী করে ফিরিয়ে দেওয়া যায়? কর্তব্যে ছেদ পড়ার সুযোগ দেননি।
ঘরে বাবার মরদেহ পড়ে রয়েছে। আগে রোগী দেখা শেষ করলেন ডাক্তারবাবু। এর পর বাবার শেষকৃত্যে যোগ দিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা অবাক নন। একজনের কথায়, ‘উনি এরকমই। রাতবিরেতে যখনই রোগী আসেন, উনি চিকিৎসা করেন। কাউকে ফিরিয়ে দেন না। ও আমাদের এলাকার গর্ব।’
বাড়ির চেম্বারে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করেন শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। এলাকায় আরও কয়েকটি জায়গায় তাঁর চেম্বার রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, মাঝেমধ্যে রাত দু’টো-তিনটে পর্যন্ত নিজের চেম্বারে রোগী দেখেন। এত ভাল চিকিৎসা করেন, যে বাইরের জেলা থেকেও অনেক রোগী তাঁর কাছে আসেন চিকিৎসা করাতে।
চুঁচুড়া পুরসভার কাউন্সিলার ইন্দ্রজিৎ দত্ত বলেন, ‘অনেক গরীব মানুষ ডাক্তারবাবুর কাছে আসেন। যে যা সামর্থ দেয়। কোনও চাহিদা নেই। চুঁচুড়ার বাইরে অন্য জেলা থেকেও রোগীরা আসেন। ভালো চিকিৎসা পান বলে। এমন ডাক্তারবাবুর জন্য গর্ববোধ করি আমরাও।’