• মুখে দিলে গলে যায়, আহারে কী তৃপ্তি! কচুবাটা খেতে লাইন লাগালেন হাজার হাজার মানুষ ...
    আজকাল | ১২ জুলাই ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: কচুবাটা উৎসব! প্রসাদ হিসেবে মানকচু বাটার স্বাদ নিতে বর্ধমানে জমা হলেন প্রায় ২০ হাজার ভক্ত। 

    স্বাধীনতার পর থেকেই পূর্ব বর্ধমানের শ্রীগুরু আশ্রমে গুরু পূর্ণিমায় বড় উৎসব হয়। এই আশ্রম এই জেলার নীলপুরে। গোটা রাজ্য থেকে ভক্তদের ঢল নামে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অন্যান্য রাজ্য এমনকী বিদেশ থেকেও ভক্তদের ভিড় লাগে এই উপলক্ষে‌। উৎসবের মূল আকর্ষণ কিন্তু কচুবাটা। অনন্য এই 'ডেলিকেসি'র স্বাদ নিতে ভক্তদের ভিড়ে আশ্রমে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যায় না। 

    বলা হয়, কচু হল বাঙালদের অন্যতম প্রিয় খাদ্য। কচুর তরকারি, কচুর লতি, ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচুর শাক-সহ কচুর বহু পদের সঙ্গে বাঙালদের সখ্যতা অনেকদিনের। কচুর প্রতি বাঙালদের এই সখ্যতার পিছনে কারণও আছে। ছিন্নমূল হয়ে ওপার বাংলা থেকে যখন উদ্বাস্তু পরিচয় নিয়ে বাঙালরা এদেশে আসেন তখন পথের পাশে অযন্তে বেড়ে ওঠা কচু ছিল তাঁদের খাবার হিসেবে অন্যতম ভরসা। তারই স্বাদের বৈচিত্র্য খুঁজতে তৈরি হয়েছে একের পর এক রেসিপি‌। 

    আবার বাঙাল অধ্যুষিত এলাকা বা কলোনীর অনেক বাড়িতেই পরিব্রাজক শ্রী দূর্গাপ্রসন্ন পরমহংসের আসন পাতা আছে। বলা হয়, ওপার বাংলা থেকে বিতারিত হয়ে এদেশে আসার পর ভাগ্য বিতারিত অনেক 'রিফিউজি'কে একটা বন্ধনে বেঁধে ভরসা জুগিয়েছিলেন দূর্গাপ্রসন্ন পরমহংস। বর্ধমানের এই আশ্রম তাঁর নিজের গড়া। কলকাতায় নাকতলাতে রয়েছে তাঁর কেন্দ্রীয় আশ্রম। তবে যেখানেই তিনি আশ্রম গড়েছিলেন সেখানেই গড়েছেন ছেলে ও মেয়েদের জন্য একটি করে স্কুল। কেন এই আশ্রমে এত ভিড় হয়? যা জানাতে গিয়ে এক ভক্ত বলেন, আচার্য দুর্গাপ্রসন্নর নিয়ম ছিল খুব সরল। সত্য, সেবা, নীতি ও ধর্ম। এই চার অনুশাসনের উপর ভিত্তি করে ছিল তার প্রচার। গোটা দেশে শ্রীগুরু সঙ্ঘের অনেক আশ্রম আছে। বারাণসী, হরিদ্বার এমনকী পুরীতেও তাঁর আশ্রম রয়েছে। কিন্তু তাঁর কঠোর নির্দেশ ছিল তিনদিনের যে উৎসব তা এখানেই হবে। জীবিত থাকাকালীন উৎসবের এই কটা দিন তিনি বর্ধমানের আশ্রমেই থাকতেন। অনেকবার এখানে এসেছেন শ্রী দুর্গাপ্রসন্ন। 

    বর্ধমানের আশ্রমিকরা জানাচ্ছেন, এবছর এই আশ্রমের ৭৫ বছর। সেজন্য এক সপ্তাহ ধরে চলবে উৎসব। পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কীর্তনের আওয়াজে এলাকায় উৎসবের মেজাজ। এসেছেন তৃণমূল বিধায়ক অদিতি মুন্সী। সঙ্গে যোগ হয়েছে হাজারে হাজারে ভক্ত‌। বৃহস্পতিবার গুরুপূর্ণিমার দিন ভোগ প্রসাদের জন্য হয়েছিল বিরাট ভিড়। শুক্রবার ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করা হয় কচুবাটা। যা এই উৎসবের অন্যতম বড় আকর্ষণ। 

    বর্ধমানের এই উৎসবে প্রতিদিন ভোগ খাওয়ানো হয়। যা গ্রহণ করেন কয়েক হাজার ভক্ত। এই উপলক্ষে নীলপুর ও অন্যান্য কয়েকটি অঞ্চলে কারুর বাড়িতে উনুন ধরানো হয় না। কিন্তু মূল আকর্ষণটা থাকে দু'দিন। তার মধ্যে একটি হল কচুবাটা উৎসব। গোটা রাজ্য থেকে নিয়ে আসা হয় সেরা সেরা মানকচু। যার খোসা ছাড়িয়ে মেসিনে বাটা হয়। এরপর সর্ষেবাটা, নুন, লেবু, সর্ষের তেল, লঙ্কা ও নারকেলবাটা মিশিয়ে তৈরি হয় এই অনন্য স্বাদের জিনিসটি। এদিন এতটাই ভিড় থাকে যে যা সামাল দিতে স্বেচ্ছাসেবকরা যথেষ্ট টেনশনে থাকেন। শোনা যায়, আচার্য বলে গিয়েছেন এই কচুবাটায় গা, হাত, পায়ের ব্যাথা দূর হয়। ফলে দূরদূরান্তের ভক্তদের কাছে ভাত ও এই কচুবাটা হল অমৃতের মতো। আর শুধু কচুবাটাই নয়, শুক্রবার ভক্তদের পাতে পড়বে ভাত, ডাল, সয়াবিন, আলুর তরকারি, আনারসের চাটনি ও একটি করে মিষ্টি। সেজন্য সকাল থেকেই শুরু হয় লম্বা লাইন। 

    আরও পড়ুন: এক দশক পর ভারতে খাতা খুলবে নতুন ব্যাঙ্ক? লাইসেন্স দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে আরবিআই

    আশ্রমের ভক্ত পলাশ দাস জানান, এবারের উৎসব ৭৫ বছর পদার্পণের। সেজন্যই এই উৎসব প্রতিটি ভক্তের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটা সময় এলাকার বিভিন্ন কলোনীতে এই সময় একের পর এক উৎসব হত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন উৎসব অনেক কমে গিয়েছে। সে কারণেও নীলপুরে এই আশ্রমের উৎসব অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
  • Link to this news (আজকাল)