• প্রথম বিয়ে লুকিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে! স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতনেরও অভিযোগ, পদ থেকে অপসারিত তৃণমূলের ব্লক সভাপতি...
    আজকাল | ১২ জুলাই ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ব্যক্তিগত জীবনের একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে বড় ধাক্কা খেলেন শান্তিপুর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সুব্রত সরকার। দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় অবশেষে তাঁকে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছে, এই ঘটনায় অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে এবং প্রয়োজনে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    সুব্রতের বিরুদ্ধে উঠেছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ। প্রথম বিয়ের কথা আড়ালে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং দুর্নীতি ও প্রতারণার মতো বিস্ফোরক অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগকারিণী অঙ্কিতা কুন্ডুর দাবি, ২০২৪ সালের ২৩ মে শান্তিপুর বিএড কলেজের সামনে থেকে সুব্রত তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যান। এরপর রানাঘাটের জহুরা মন্দিরে তাঁদের বিয়ে হয়। কিছুদিনের মধ্যেই অঙ্কিতা জানতে পারেন, সুব্রত বিবাহিত এবং তাঁর একটি পরিবারও রয়েছে। তখন থেকেই তাঁর উপর শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক নিগ্রহ।

    অঙ্কিতার অভিযোগ, সুব্রত তাঁকে মুখে অ্যাসিড ছোড়ার হুমকি দেন। এমন কি প্রাণনাশের চেষ্টা করেন। শুধু তাই নয়, তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করেছেন, সরকারি প্রকল্পের (যেমন শৌচালয় তৈরির টাকা, তাঁত প্রকল্পের অর্থ) টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শান্তিপুরের অন্তত চারটি সমিতির সঙ্গে যুক্ত সুব্রতের বিরুদ্ধে অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগও উঠেছে।

    পেশায় স্কুলশিক্ষিকা অঙ্কিতা আরও জানিয়েছেন, সুব্রতের বিরুদ্ধে মুখ খোলার পর থেকেই তাঁর ওপর মানসিক নির্যাতনের মাত্রা চরমে পৌঁছয়। তাঁকে নিয়মিত হুমকি দেওয়া হত এবং সমাজ ও কর্মস্থলে অপদস্থ করার চেষ্টা করা হত। বর্তমানে আতঙ্কে রয়েছেন তিনি। প্রশাসনের কাছে সুব্রতের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।

    স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ মনে করছে, রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর দুর্নীতির জোরে দ্রুত প্রভাব বাড়িয়েছিলেন সুব্রত সরকার। শান্তিপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্লকে তিনি অল্প সময়েই দাপট দেখাতে শুরু করেন। তাঁর প্রভাব এতটাই ছিল যে, স্থানীয় স্তরে কেউ সহজে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করতেন না। দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে একাধিক সুবিধা আদায় করতেন, এমন অভিযোগও সামনে এসেছে।

    আরও পড়ুন: মুখে দিলে গলে যায়, আহারে কী তৃপ্তি! কচুবাটা খেতে লাইন লাগালেন হাজার হাজার মানুষ

    রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “সুব্রতের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দলীয় ভাবমূর্তিকে আঘাত করছে। তাই তাঁকে আপাতত সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে প্রয়োজনে দল কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে।”

    তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুব্রত। তিনি বলেন, “আমি এখনও কোনও অফিসিয়াল অপসারণপত্র পাইনি। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে ও রাজনৈতিক চক্রান্ত।”

    আরও পড়ুন: নেপালকে ব্যবহার করে হামলা চালাতে পারে জইশ এবং লস্কর, ভারতকে হুঁশিয়ারি প্রতিবেশী দেশের

    দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শান্তিপুর ব্লকে দ্রুত নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শান্তিপুরের নেতৃত্বে এই পরিবর্তন ভোটের সমীকরণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

    এই ঘটনা শুধু একজন নেতার ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্ক নয়, এটি শান্তিপুর ব্লকে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট, নৈতিকতা এবং জনবিশ্বাস নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলে দিল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
  • Link to this news (আজকাল)