• বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরেও সামশেরগঞ্জ শান্ত ছিল, ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা থেকে বিজেপিকে আক্রমণ ফিরহাদের...
    আজকাল | ১২ জুলাই ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: শুক্রবার মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে  ধুলিয়ান পুরসভা এলাকায় একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা করতে এসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের পুলিশি হেনস্থার শিকার হওয়া এবং ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরির অভিযোগে বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন রাজ্যের  পুর ও নগর উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। 

    শুক্রবার সকালে বহরমপুর সার্কিট হাউস এবং জেলা তৃণমূল ভবনে দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে  দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন ফিরহাদ। বিকালে তিনি ধুলিয়ান পুরসভা এলাকায় একুশে জুলাইয়ের  প্রস্তুতি সভায় অংশগ্রহণ করেন। 

    প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একটি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গোটা দেশজুড়ে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল সামশেরগঞ্জের নাম।  সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে ফিরহাদ বলেন, 'ভারত যে সময় স্বাধীনতা পেয়েছিল বা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর গোটা দেশে যখন  সাম্প্রদায়িকতার আগুনে পুড়েছিল সেই সময়ও সামশেরগঞ্জ  শান্ত ছিল। সম্প্রতি এখানে একটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা তার জন্য দুঃখিত।  কিন্তু সেই ঘটনা কয়েকজন দাঙ্গাকারী করেছে। দাঙ্গাকারীদের কোনও ধর্ম হয় না।'

    আরও পড়ুন: সাধারণ জীবনযাপন, ৪৫ বছরে ৪.৭ কোটির মালিক হবেন কীভাবে? কোটিপতি হওয়ার রহস্য ফাঁস করলেন ব্যক্তি

     মন্ত্রী অভিযোগ করেন,'এই ঘটনা বিজেপির হাতকে শক্ত করতে করা হয়েছে। আর এই ঘটনার পেছনে যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের যেন শাস্তি দেওয়া হয়। তবে আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন রাখব নিরীহ মানুষের গায়ে যেন এই ঘটনার আঁচ না লাগে। '

    কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে সন্ত্রাসবাদীরা যেভাবে পর্যটকদের ধর্ম জেনে তাঁদের হত্যা করেছিল সেই প্রসঙ্গও এদিন উত্থাপন করেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন,ইসলাম কোনও নিরীহ মানুষকে মারতে শেখায় না।  আমাদেরকে খুঁজতে হবে এই সন্ত্রাসবাদী কারা।  বিজেপির নাম না করে ফিরহাদ বলেন, 'পহেলগাঁওতে  নিহতদের দেহ যখন রাজ্যে ফিরে এল সেই সময় কয়েকজন নেতা এয়ারপোর্টে এসে দাঁড়িয়ে হিন্দু হিন্দু করে চলে গেল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই পরিবারগুলোর পাশে আমরাই ছিলাম। এমনকি সামশেরগঞ্জের  ঘটনা প্রশাসন ঠান্ডা করে দিতেই তাঁদেরকে আর এখানে দেখা যায়নি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ঘরবাড়ি সবকিছু করে দিয়েছেন।' গেরুয়া শিবিরকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, বিজেপি শুধু ভাবছে হিন্দু হিন্দু করে সব ভাগ করবে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করে ফিরহাদ বলেন,'আমি আজই  দেখলাম রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আমার সম্পর্কে বলেছেন আমি নাকি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের নেতা।  কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছেন যখন আমাদের দলে ছিলেন সেই সময় তিনি চেতলা অগ্রণী ক্লাবের পূজো দেখতে আসতেন। ওঁরা মমতা ব্যানার্জি নয়, তাঁর আদর্শকে হত্যা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সেই প্রচেষ্টা কোনওদিনই বাস্তবে সম্ভব হবে না।' ভিন রাজ্যে  বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের 'বাংলাদেশি' বলে দাগিয়ে দেওয়ার  প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন,' ওড়িশা বা দিল্লির কলোনিতে বাংলা ভাষাভাষী এই রাজ্যের বহু মানুষদের আটকে রাখা হচ্ছে বা সেই কলোনিতে জল-বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেক সময় আমরা দেখছি বিএসএফ জোর করে তাদের বাংলাদেশে 'পুশ ব্যাক' করে দিচ্ছে।  কোনও আইন রক্ষাকারী  সংস্থা জোর করে কাউকে বাংলাদেশে পাঠাতে পারে না। কাউকে বাংলাদেশি প্রমাণ করতে হলে তাঁকে কোর্টে পেশ করতে হবে। এই দেশে যেন মোদি এবং অমিত শাহর জমিদারি চলছে।' 

    পাশাপাশি সামশেরগঞ্জের মাটিতে দাঁড়িয়ে সেখানকার গঙ্গা নদীর ভাঙনের  প্রসঙ্গও আজ উত্থাপন করেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ  হাকিম।  একটি কাগজ দেখিয়ে তিনি বলেন,' ২০০২ সালের চুক্তি অনুযায়ী কেন্দ্র সরকার ফরাক্কা ব্যারেজের দুই প্রান্তে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু 'সাদা দাড়ি'র সরকার বর্তমানে ফরাক্কার ১৯ কিলোমিটার পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণ করছে না। গঙ্গা নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের কোনও টাকা কেন্দ্র সরকার দেয়নি। রাজ্য সরকারের ১.৮৭ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রেখেছে 'দাড়িওয়ালা' এবং 'মোটা ভাই'। প্রচুর আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মমতা ব্যানার্জি সামশেরগঞ্জের নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।' ফিরহাদ হাকিম এদিন বাম-কংগ্রেসের জোট প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুর্শিদাবাদবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন,'দুটো ল্যাংড়া একসঙ্গে চলছে। কিন্তু তারা রাজ্যের সরকার গড়তে পারবে না। আমাদের লড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে।' তিনি বিজেপিকে সরাতে  সকলকে তৃণমূলের হাত শক্ত করার আবেদন করেন। এর পাশাপাশি একুশে জুলাই কলকাতার রাজপথ মুর্শিদাবাদ থেকে গিয়ে ভরিয়ে দেওয়ারও আবেদন রাখেন ফিরহাদ ।
  • Link to this news (আজকাল)