সুমন করাতি, হুগলি: ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে প্রথমে পরিচয়। তারপর তরুণী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাস অর্জন করা। সেই বিশ্বাস থেকেই ওই পরিবারের থেকে ৪২ লক্ষ টাকা প্রতারণা করে গা ঢাকা দেওয়ার অভিযোগ। পুলিশ তদন্তে নেমে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতদের নাম জাহির আব্বাস ও অভিষেক রায়। একটা চক্র কাজ করছে বলে অভিযোগ। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির কামারকুণ্ডুতে। এদিন পুলিশের তরফে এই বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়।
জানা গিয়েছে, হুগলির কামারকুণ্ডু এলাকায় ওই তরুণীর বাড়ি। বিবাহের জন্য ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে তাঁর অ্যাকাউন্ট খোলা ছিল। সেখানেই এক যুবকের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। নিজেকে চালের ব্যবসায়ী বলে ওই যুবক পরিচয় দিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে কথাবার্তা, আলাপ-পরিচয় বাড়ে। ওই তরুণীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করেন ওই যুবক। ভালো ব্যবহারে ওই তরুণীর পরিবারে বিশ্বাস জয় করেছিলেন ওই যুবক। দু’জনের সম্পর্ক পরিণতির দিকে যাচ্ছে বলেও ওই পরিবার মনে করেছিল। তবে সব আলাপ-পরিচয়ই ফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে চলে। এই অবস্থায় অভিযুক্ত তরুণীর কাছে টাকা চায়। দফায় দফায় ৪২ লক্ষ টাকা ওই পরিবারের থেকে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তারপরই ওই সাইটের অ্যাকাউন্টটি ডিলিট করে দেওয়া হয়। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে শেষপর্যন্ত গত ২৬ মে হুগলি সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণী।
পুলিশ তদন্তে নেমে একাধিক সূত্র খুঁজতে থাকে। গত ৩ জুলাই অভিষেককে ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে গতকাল, বৃহস্পতিবার রাতে খানাকুল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জাহিরকে। আজ, শুক্রবার হুগলি সাইবার ক্রাইম থানায় সাংবাদিক বৈঠক করেন হুগলি গ্রামীণ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সরকার। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মূল অভিযুক্ত এখনও অধরা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ওই যুবক তরুণীকে জানিয়েছিলেন, জিএসটি সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবসায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেকারণে, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই শুরু হয় টাকা নেওয়া। অভিযোগ, ধাপে ধাপে মোট পাঁচটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দিয়ে ৪২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। তারপর থেকেই আর খোঁজ নেই ওই যুবকের।
ধৃত দু’জনকে ওই যুবক নিজেদের ম্যানেজার বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। সেই সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার করা হল দু’জন। ধৃতদের থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন, এটিএম কার্ড ও ব্যাঙ্কের পাশবই। ধৃতদের উদ্ধার করা হয়েছে ৬ লক্ষ টাকা। মূল অভিযুক্তের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছে। এছাড়া আর কেউ জড়িত কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।